লন্ডনে প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে সমর্থন করে বিক্ষোভে প্রায় ৯০০ গ্রেপ্তার

সম্পাদনা করেছেন: Татьяна Гуринович

গত ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে লন্ডনের পার্লামেন্ট স্কোয়ারে প্যালেস্টাইন অ্যাকশন (Palestine Action) গোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে আয়োজিত এক বিক্ষোভে প্রায় ১৫০০ মানুষ অংশ নেয়। মেট্রোপলিটন পুলিশ এই বিক্ষোভের সময় সন্ত্রাস দমন আইন (Terrorism Act) এর অধীনে মোট ৮৯০ জনকে গ্রেপ্তার করে, যার মধ্যে ৮৫৭ জনকে এই আইনের আওতায় আনা হয়। এই ঘটনাটি যুক্তরাজ্যে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং জাতীয় নিরাপত্তার মধ্যেকার চলমান বিতর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছে।

'ডিফেন্ড আওয়ার জuries' (Defend Our Juries) নামক একটি সংগঠন এই প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছিল। বিক্ষোভকারীরা প্ল্যাকার্ড বহন করে তাদের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছিল, যেখানে লেখা ছিল "আমি গণহত্যাকে বিরোধিতা করি। আমি প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে সমর্থন করি।" উল্লেখ্য, গত জুলাই মাসে যুক্তরাজ্যের সরকার প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সরকারের ভাষ্যমতে, এই গোষ্ঠীটি ইসরায়েলের সামরিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা ঘাঁটিতে ভাঙচুর চালিয়েছে, যার মধ্যে রয়্যাল এয়ার ফোর্স (RAF) এর বিমান ক্ষতিগ্রস্ত করার ঘটনাও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

সন্ত্রাস দমন আইন ২০০০ (Terrorism Act 2000) অনুযায়ী, কোনো নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনকে সমর্থন করা একটি ফৌজদারি অপরাধ, যার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার ক্লিয়ার স্মার্ট উল্লেখ করেছেন যে, তাদের কর্মকর্তারা বিক্ষোভকারীদের দ্বারা শারীরিক ও মৌখিক হেনস্থার শিকার হয়েছেন।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক যুক্তরাজ্যের সরকারের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন যে, সন্ত্রাস দমন আইনকে এভাবে ব্যবহার করা মৌলিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ এবং এটি মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করতে পারে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনও এই নিষেধাজ্ঞাকে অতিরিক্ত কঠোর এবং প্রতিবাদের অধিকারের পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছে। প্যালেস্টাইন অ্যাকশন গোষ্ঠীটি বর্তমানে যুক্তরাজ্যের আদালতের মাধ্যমে এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আইনি চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।

এই প্রতিবাদ এবং ব্যাপক গ্রেপ্তার যুক্তরাজ্যের নাগরিক অধিকার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর সরকারের নীতির গভীর প্রভাব সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। এটি এমন এক সময়ে ঘটছে যখন বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন গোষ্ঠী তাদের মতামত প্রকাশ এবং প্রতিবাদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার হচ্ছে, যা একটি বৃহত্তর সামাজিক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই পরিস্থিতি সমাজের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে বিদ্যমান বিভাজন এবং ভিন্নমত প্রকাশের জন্য একটি নিরাপদ ও উন্মুক্ত পরিবেশ তৈরির প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরেছে, যা সকলের জন্য একটি উন্নততর বোঝাপড়া এবং সহাবস্থানের পথ খুলে দিতে পারে।

উৎসসমূহ

  • Deutsche Welle

  • Associated Press

  • Reuters

  • Reuters

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।