সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের জন্য প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে অবকাঠামো, পরিবহন এবং আবাসন খাতের উন্নয়ন। এই বিনিয়োগগুলি সিরিয়ার যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠনের প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করবে এবং দেশটির অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করবে।
গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিগুলির মধ্যে রয়েছে:
দামেস্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ: কাতারের ইউসিসি হোল্ডিং (UCC Holding) প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে দামেস্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিমানবন্দরটির বার্ষিক যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৩১ মিলিয়ন পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে।
দামেস্ক মেট্রো: সংযুক্ত আরব আমিরাতের ন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন (National Investment Corporation) দামেস্ক মেট্রো ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এই মেট্রো ব্যবস্থা প্রতিদিন প্রায় ৭৫০,০০০ যাত্রী পরিবহনের ক্ষমতা রাখবে।
দামেস্ক টাওয়ার্স: ইতালি-ভিত্তিক ইউবাকো (UBAKO) ২ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে দামেস্ক টাওয়ার্স আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। এই প্রকল্পে ৬০টি আবাসিক টাওয়ার এবং ২০,০০০ আবাসন ইউনিট অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
সৌদি আরবের বিনিয়োগ: সৌদি আরব জুলাই মাসে বিভিন্ন খাতে ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
জাতিসংঘের মতে, সিরিয়ার যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠনের জন্য আনুমানিক ৪০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রয়োজন। এই বিনিয়োগগুলি দেশের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান ৭ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা'র সাথে দামেস্কে সাক্ষাৎ করেন। তিনি সিরিয়ার স্থিতিশীলতা ও পুনর্গঠনে তুরস্কের সমর্থনের আশ্বাস দেন এবং আইএসআইএস-সম্পর্কিত শিবিরগুলি পরিচালনা ও সুরক্ষায় সহায়তার প্রস্তাব দেন। এই আলোচনায় আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং ইসরায়েলের কার্যকলাপ নিয়েও কথা হয়, যা তুরস্ক এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার নীতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
সিরিয়ায় আগামী ১৫-২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এটি বাশার আল-আসাদের পতনের পর প্রথম নির্বাচন এবং আহমেদ আল-শারা'র নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন সিরিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই বিনিয়োগ চুক্তিগুলি সিরিয়ার পুনর্গঠন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে সিরিয়া ধীরে ধীরে যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে একটি স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে বলে আশা করা যায়। এই উদ্যোগগুলি সিরিয়ার জনগণের জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।