২০২৫ সালের প্রথমার্ধে বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য শক্তি কয়লার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে

২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে, বিশ্বজুড়ে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলি কয়লার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে, যা বিশ্বব্যাপী শক্তি সরবরাহে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। এই অর্জন মূলত সৌর এবং বায়ু শক্তির দ্রুত প্রসারের কারণে সম্ভব হয়েছে, যা বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে সক্ষম। এম্বার (Ember) নামক একটি গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদন ছিল ৫,০৭২ টেরাওয়াট-ঘন্টা (TWh), যেখানে কয়লার উৎপাদন ছিল ৪,৮৯৬ টেরাওয়াট-ঘন্টা (TWh)। এই ঐতিহাসিক ঘটনাটি ৮৮টি দেশ এবং বিশ্বব্যাপী বিদ্যুতের চাহিদার ৯৩% জুড়ে রয়েছে। বিশ্বব্যাপী বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য শক্তির অংশীদারিত্ব বেড়ে ৫০.৯% হয়েছে, যেখানে কয়লার অংশীদারিত্ব কমে ৪৯.১% হয়েছে। এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যা নির্দেশ করে যে পরিচ্ছন্ন শক্তি বিশ্বব্যাপী বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম। এম্বারের সিনিয়র পাওয়ার অ্যানালিস্ট মালগোরজাতা ভিয়াট্রোস-মোতিকা এটিকে 'একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়' হিসেবে অভিহিত করেছেন।

সৌর শক্তি এই অগ্রগতির প্রধান চালিকাশক্তি ছিল, যা পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩১% বৃদ্ধি পেয়ে ১,৩০৩ TWh-এ পৌঁছেছে। বায়ু শক্তিও বিশ্বব্যাপী বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৭.৭% সরবরাহ করেছে, যার উৎপাদন ছিল ১,৩৬৫ TWh, যা নবায়নযোগ্য শক্তিকে প্রথমবারের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির স্থানচ্যুত করতে সাহায্য করেছে। এই পরিবর্তনের পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে চীন এবং ভারত। চীনে, সৌর ও বায়ু শক্তির উৎপাদন বৃদ্ধি সমস্ত অভ্যন্তরীণ বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করেছে, যার ফলে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ১.৭% হ্রাস পেয়েছে। ভারতেও, নবায়নযোগ্য শক্তির বৃদ্ধি বিদ্যুতের চাহিদার তিন গুণেরও বেশি হয়েছে, যার ফলে কয়লা এবং গ্যাসের ব্যবহার যথাক্রমে ৩.১% হ্রাস পেয়েছে।

অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো কিছু উন্নত অঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বেড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে কয়লার ব্যবহার ১৭% বেড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে, সৌর উৎপাদন বৃদ্ধি সত্ত্বেও, আবহাওয়ার কারণে বায়ু এবং জলবিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় গ্যাস ও কয়লার ব্যবহার বেড়েছে। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (IEA) পূর্বাভাস দিয়েছে যে ২০২৮ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষমতা দ্বিগুণ হয়ে ৭,৩০০ GW-এ পৌঁছাতে পারে, যার মধ্যে প্রায় ৮০% সৌর শক্তি থেকে আসবে।

এই মাইলফলকটি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই এবং টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থার দিকে বিশ্বব্যাপী উত্তরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় নির্দেশ করে। এটি শক্তি খাতকে কার্বনমুক্ত করার এবং আন্তর্জাতিক জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে একটি বাস্তবসম্মত অগ্রগতি। যদিও এই পরিবর্তন বিশ্বজুড়ে সমানভাবে হচ্ছে না, তবুও পরিচ্ছন্ন শক্তির এই ক্রমবর্ধমান অগ্রগতি একটি ইতিবাচক ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়।