সম্প্রতি ফাঁস হওয়া নথিপত্র বিশ্লেষণ করে জানা গেছে যে রাশিয়া চীনকে উন্নতমানের প্যারাশুট সিস্টেম এবং উভচর আক্রমণের যান সরবরাহ করছে। রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট (RUSI) লন্ডনের এক বিশ্লেষণে এই তথ্য উঠে এসেছে। এই সামরিক সরঞ্জামগুলি তাইওয়ানে চীনের সম্ভাব্য বিমান আক্রমণের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে। এই চুক্তির মধ্যে প্রশিক্ষণ এবং কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বিষয়গুলিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
একটি বিশেষ বৈঠকে, যা ৮ মার্চ, ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, রাশিয়া এই সিস্টেমগুলির কার্যকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ সরবরাহ করতে সম্মত হয়েছিল। এই নথিগুলি 'ব্ল্যাক মুন' নামক হ্যাকার গোষ্ঠী থেকে পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। প্রায় ৮০০ পৃষ্ঠার এই নথিতে বিভিন্ন বৈঠকের বিবরণ, অর্থপ্রদানের সময়সূচী এবং উচ্চ-উচ্চতার প্যারাশুট সিস্টেম (যেমন ডালনোলেট) ও উভচর আক্রমণের যানের সরবরাহ সংক্রান্ত তথ্য রয়েছে। ডালনোলেট সিস্টেমটি ১৯০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত ওজন চরম উচ্চতা থেকে নামাতে সক্ষম, যা অজ্ঞাতসারে অনুপ্রবেশের সুযোগ করে দিতে পারে। চীন ৮,০০০ মিটার উচ্চতা থেকে ড্রপ পরীক্ষার জন্য অনুরোধ করেছে, যা ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত গ্লাইড করার অনুমতি দেবে।
এই চুক্তিতে প্যারাট্রুপার বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ এবং কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই তথ্যগুলি তাইওয়ান প্রণালীতে ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। দুটি প্রধান বিশ্বশক্তির মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, বিশেষ করে এমন সক্ষমতা যা একটি সংঘাতের পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা যেতে পারে, তা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
রাশিয়া এই চুক্তির মাধ্যমে চীনের সামরিক সরবরাহকারী হিসেবে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে এবং ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে চাইছে। কিছু বিশ্লেষকের মতে, রাশিয়া হয়তো বেইজিংকে তাইওয়ান নিয়ে ওয়াশিংটনের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে ফেলতে চাইছে, যাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ ইউক্রেন থেকে সরে যায়। তবে, ফাঁস হওয়া নথিগুলি তাইওয়ান আক্রমণের কোনও তাৎক্ষণিক পরিকল্পনার নিশ্চিত প্রমাণ দেয় না, বরং এটি চীনের বর্ধিত সক্ষমতার ইঙ্গিত দেয়। এই চুক্তির সবচেয়ে বড় সুবিধা চীনের জন্য সম্ভবত প্যারাট্রুপার বাহিনীর কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ এবং পদ্ধতিতে নিহিত, কারণ রাশিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা রয়েছে যা চীনের নেই। এই প্রযুক্তি হস্তান্তরের ফলে চীন তাদের নিজস্ব অস্ত্র উৎপাদন এবং আধুনিকীকরণের ক্ষমতা বাড়াতে পারবে। এই পরিস্থিতি ভূ-রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত জটিল এবং ক্রমাগত পরিবর্তনশীল।