পুতিন-কিম বৈঠক ও বৈশ্বিক মেরুকরণ: ইউক্রেন শান্তি আলোচনার নতুন সম্ভাবনা

সম্পাদনা করেছেন: Татьяна Гуринович

চীনের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বিজয়ীর ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে বেইজিংয়ে আয়োজিত এক বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের উপস্থিতি বিশ্বজুড়ে ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তাদের উপস্থিতি কেবল একটি কুচকাওয়াজেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং এটি বিশ্ব মঞ্চে পরিবর্তিত জোট এবং ক্ষমতার ভারসাম্যের একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করেছে।

এই আবহে, পুতিন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে মস্কোতে সাক্ষাতের ব্যাপারে তার শর্তসাপেক্ষ আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, যা শান্তি আলোচনার নতুন দ্বার উন্মোচন করতে পারে। পুতিন জানিয়েছেন যে, জেলেনস্কির সঙ্গে একটি সাক্ষাৎ তখনই সম্ভব যদি তা ভালোভাবে প্রস্তুত করা হয় এবং সুনির্দিষ্ট ফলাফল বয়ে আনে। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, ইউক্রেনকে অবশ্যই সামরিক আইন প্রত্যাহার, নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং আঞ্চলিক বিষয়গুলিতে গণভোটের মতো কিছু পূর্বশর্ত পূরণ করতে হবে। এই শর্তগুলি রাশিয়ার ২০২২ সালের ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল সংযুক্তির দাবির সঙ্গে সম্পর্কিত, যা ইউক্রেন এবং পশ্চিমা বিশ্ব স্বীকার করে না।

যদিও জেলেনস্কি শান্তিকামী আলোচনার জন্য বারবার পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন, ক্রেমলিন অতীতে জেলেনস্কির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং সরাসরি আলোচনার বিরুদ্ধে একটি ডিক্রি জারি করেছে। অন্যদিকে, এই সামরিক কুচকাওয়াজে পুতিন ও কিমের উপস্থিতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনার মুখে পড়েছে। ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন যে, এই নেতারা আমেরিকার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। তবে, রাশিয়ার একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ট্রাম্পের এই মন্তব্যকে ব্যঙ্গাত্মক বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

এই ঘটনাটি চীন, রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার মধ্যে ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা এবং পশ্চিমা-নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থার প্রতি একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (SCO)-এর ২৫তম শীর্ষ সম্মেলনও এই সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে সদস্য দেশগুলো সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতার মতো বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সম্মেলনটি একটি বহুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা গঠনের দিকে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যেখানে SCO একটি প্রধান ভূমিকা পালন করছে।

ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, চীন, রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার এই জোট কেবল আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকেই প্রভাবিত করছে না, বরং বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকেও নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে। বিশেষ করে, ডলারের উপর নির্ভরতা কমানোর প্রচেষ্টা এবং বিকল্প বাণিজ্য মুদ্রার ব্যবহার বৃদ্ধি এই জোটের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এই প্রেক্ষাপটে, পুতিনের জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাতের শর্তসাপেক্ষ আগ্রহ একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যেতে পারে, যা চলমান সংঘাতের একটি সম্ভাব্য সমাধানের পথ খুলে দিতে পারে। তবে, উভয় পক্ষের অনড় অবস্থান এবং পারস্পরিক অবিশ্বাস এই আলোচনাকে কতটা ফলপ্রসূ করবে, তা সময়ই বলে দেবে। জাপানের মতো দেশগুলো এই ক্রমবর্ধমান জোটের উপর নিবিড় নজর রাখছে, কারণ এটি তাদের আঞ্চলিক নিরাপত্তার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

উৎসসমূহ

  • Daily Mail Online

  • Reuters

  • Financial Times

  • Reuters

  • France 24

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।