গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান সামরিক অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় তুরস্ক সরকার ইসরায়েলের সাথে সমস্ত বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার এবং ইসরায়েলি বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করার এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। তুরস্ক এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
২৯শে আগস্ট, ২০২৫ তারিখে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান এক বিশেষ সংসদীয় অধিবেশনে এই ঘোষণা দেন। তুরস্কের এই সিদ্ধান্তের ফলে উভয় দেশের মধ্যেকার ৭ বিলিয়ন ডলারের বার্ষিক বাণিজ্য সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাবে। ফিদান জানান, তুরস্ক ইসরায়েলি জাহাজগুলোকে তাদের বন্দরে প্রবেশাধিকার দেবে না এবং তুর্কি জাহাজগুলোও ইসরায়েলের বন্দরে যেতে পারবে না। এছাড়াও, ইসরায়েলগামী অস্ত্র ও গোলাবারুদ বহনকারী কন্টেইনার জাহাজগুলোর প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং ইসরায়েলি বিমানগুলোর তুর্কি আকাশসীমা ব্যবহারও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিদান জোর দিয়ে বলেন যে, ইসরায়েলের গাজায় দুই বছর ধরে চলা আগ্রাসন মানব ইতিহাসের এক অন্ধকার অধ্যায় এবং এই কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইন ও মানবিক মূল্যবোধকে উপেক্ষা করছে। তিনি আরও সতর্ক করে দেন যে, ইসরায়েলের এই ধরনের কর্মকাণ্ড পুরো অঞ্চলকে সংঘাতে নিমজ্জিত করতে পারে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান দীর্ঘকাল ধরেই গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচক। তিনি ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং নভেম্বরে ২০২৩-এ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে অ্যাডলফ হিটলারের সাথে তুলনা করেছেন। এই নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো গত বছরের মে মাসে তুরস্ক কর্তৃক ইসরায়েলের সাথে সরাসরি বাণিজ্য স্থগিত করার সিদ্ধান্তের একটি ধারাবাহিকতা, যখন তুরস্ক গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং মানবিক সহায়তা প্রবেশের দাবি জানিয়েছিল।
তুরস্কের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রভাব ফেলেছে; দেশটি দক্ষিণ আফ্রিকার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) দায়ের করা গণহত্যার মামলায় যোগ দেওয়ার জন্য আবেদন করেছে, যা আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। তুরস্কের এই কঠোর অবস্থান কেবল কূটনৈতিক উত্তেজনাকেই বাড়িয়ে তোলেনি, বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে আঙ্কারার উদ্বেগকেও প্রতিফলিত করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিদান ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে 'সন্ত্রাসী রাষ্ট্র মানসিকতার' স্পষ্ট লক্ষণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে, অন্য কোনো দেশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এত কার্যকর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। হামাস তুরস্কের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে অন্যান্য দেশকেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞাগুলো ইসরায়েলের সরবরাহ ব্যবস্থা ও বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যাঘাত ঘটাবে বলে আশা করা হচ্ছে, কারণ তুরস্কের আকাশসীমা অনেক দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিমান পথ।
এই ঘটনাটি আন্তর্জাতিক আইন ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতি তুরস্কের অঙ্গীকার এবং গাজার মানবিক সংকট মোকাবেলায় তাদের দৃঢ় অবস্থানকে তুলে ধরে। এই পদক্ষেপটি বিশ্ব মঞ্চে ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকারের পক্ষে একটি শক্তিশালী বার্তা প্রেরণ করে, যা বিশ্বজুড়ে নিপীড়িতদের জন্য আশার আলো জাগাতে পারে এবং একটি ন্যায়সঙ্গত বিশ্ব ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করতে পারে।