নেপালের তরুণদের প্রতিবাদ: সামাজিক মাধ্যম নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংঘর্ষে নিহত ১৭

সম্পাদনা করেছেন: Татьяна Гуринович

নেপালের তরুণ প্রজন্ম এক অভূতপূর্ব প্রতিবাদের ঢেউ তুলেছে, যা দেশটির রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে, সরকার ২৬টি সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করার পর থেকেই দেশজুড়ে তরুণদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এই নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি, দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ এই আন্দোলনকে আরও তীব্র করে তোলে। প্রাথমিকভাবে অনলাইনে শুরু হওয়া এই প্রতিবাদ দ্রুতই রাজপথে ছড়িয়ে পড়ে。

৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে, রাজধানী কাঠমান্ডুতে হাজার হাজার তরুণ বিক্ষোভকারী পার্লামেন্ট ভবনের দিকে অগ্রসর হয় এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এই সংঘর্ষ অত্যন্ত ভয়াবহ রূপ ধারণ করে, যেখানে পুলিশ টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট এবং জলকামান ব্যবহার করে। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, এই বিক্ষোভে কমপক্ষে ১৯ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন। এই ঘটনা নেপালের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী কে.পি. শর্মা ওলি জানান যে, দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় এই পদক্ষেপ অপরিহার্য ছিল। তিনি বলেন, "राष्ट्रকে দুর্বল করার যেকোনো প্রচেষ্টা সহ্য করা হবে না।" অন্যদিকে, সমালোচকরা এই নিষেধাজ্ঞাকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করার এবং ভিন্নমত দমনের একটি কৌশল হিসেবে দেখছেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের নিন্দা জানিয়েছে এবং ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।

এই প্রতিবাদের মূল কারণ হিসেবে শুধু সামাজিক মাধ্যম নিষেধাজ্ঞা নয়, বরং দেশের গভীরে প্রোথিত দুর্নীতি এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যও উঠে এসেছে। তরুণ প্রজন্ম তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং তারা সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা দাবি করছে। "নেপো কিডের" মতো সামাজিক মাধ্যমে প্রচলিত হ্যাশট্যাগগুলো সমাজের উচ্চবিত্ত ও রাজনৈতিক পরিবারের সন্তানদের বিলাসবহুল জীবনযাত্রা এবং দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের দিকে ইঙ্গিত করে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

এই ঘটনাপ্রবাহ নেপালের তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক সচেতনতা এবং তাদের অধিকার আদায়ের দৃঢ় সংকল্পের প্রতিফলন। যদিও পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত, এই আন্দোলন একটি বৃহত্তর আলোচনার জন্ম দিয়েছে যা মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ডিজিটাল অধিকার এবং তরুণদের জাতীয় উন্নয়নে ভূমিকার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে এসেছে। এই সংকটময় মুহূর্তে, তরুণদের সম্মিলিত কণ্ঠস্বর পরিবর্তনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

উৎসসমূহ

  • Al Jazeera Online

  • Nepal blocks Facebook, X, YouTube and others for failing to register with the government

  • Nepal police shoot and kill at least 17 people protesting a social media ban

  • Nepali police fire tear gas and rubber bullets at protesters outside parliament

  • ‘Nation being undermined cannot be tolerated ’ says Oli on Nepal govt’s ban on social media

  • Nepal: Restrictive social media legislation, targeting of journalists and excessive force at protests put freedoms at risk

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।