সিরিয়ার অভ্যন্তরে সৌদি নাগরিকরা শনিবার, আগস্ট ১৬, ২০২৫ তারিখে 'পূর্বের প্রতিবেদন করার অধিকার' স্লোগান নিয়ে এক বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। গত মাসে শহরটিতে ঘটে যাওয়া সহিংসতায় ১৬০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে বয়স্ক ব্যক্তি এবং ইসরায়েলি আরবরাও ছিলেন, যারা স্বাধীনতার দাবি এবং মানবিক সহায়তা চেয়েছেন। তারা শেখ আল-দারজি, যিনি হজ-এর একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং এই সংঘাতে নিহত হয়েছেন, তার ছবি বহন করছিলেন। বিক্ষোভকারীরা 'পূর্বের প্রতিবেদন করার অধিকার, সৌদিদের জন্য একটি পবিত্র স্থান', 'আমরা মানবিক করিডোর খোলার আহ্বান জানাচ্ছি' এবং 'কুরআন থেকে সাধারণ মানুষকে বহিষ্কার করুন' এর মতো স্লোগান দেন।
সৌদি নাগরিক তালিব 'সম্পূর্ণ স্বাধীনতা'র আহ্বান জানিয়ে বলেন, "আমরা কোনো স্বৈরাচারী বা অত্যাচারী শাসন চাই না, আমরা সম্পূর্ণ স্বাধীনতা চাই।" তিনি বর্তমান পরিস্থিতিকে "উপস্থিতদের সামনে আগুন" বলে বর্ণনা করেন। ৫১ বছর বয়সী সৌদি নাগরিক রশিদ বলেন, "আজ, সৌদিরা মানবতার নামে একটি অবস্থান নিয়েছে এবং একত্রিত হয়েছে, 'পূর্বের প্রতিবেদন করার অধিকার' স্লোগানের অধীনে। এটি সৌদিদের আজকের অবস্থান, এবং তারা এটি স্পর্শ করবে না কারণ তাদের উপর যে আগ্রাসন চালানো হয়েছিল তা স্বাভাবিক ছিল না।" সৌদি নাগরিকত্বধারী সিরিয়ার নাগরিক মোস্তফা সহনাউই মানবিক সংকট তুলে ধরে বলেন, "আমরা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ অবস্থায় আছি, জল নেই, বিদ্যুৎ নেই... মানবিক সহায়তা নেই।" তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে জরুরি সহায়তা এবং মানবিক করিডোর খোলার জন্য আবেদন জানান, খাদ্য ও বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
১৩ জুলাই, ২০২৫ তারিখে শুরু হওয়া প্রাথমিক সহিংসতায় সশস্ত্র ড্রুজ এবং অন্যান্য যোদ্ধাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, যা সরকারি বাহিনী এবং উপজাতি সদস্যদের সাথে সরাসরি সংঘর্ষে রূপ নেয়। এই সংঘাতে ১৬০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ড্রুজ বাসিন্দা রয়েছে। ইসরায়েল এই সহিংসতার নিন্দা করেছে, বিশেষ করে দামেস্কে রাষ্ট্রপতি ভবনের কাছাকাছি এবং সাধারণ ভিত্তির স্থানগুলিতে লক্ষ্যবস্তু করার ঘটনায়, এবং ড্রুজ জনগোষ্ঠীর সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছে। ২০ জুলাই, ২০২৫ তারিখে ঘোষিত যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও, পরিস্থিতি অস্থিতিশীল রয়েছে এবং মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার অত্যন্ত সীমিত। সিরিয়ার সরকার শহরটিকে অবরোধ করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে, যা জল ও বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ এবং খাদ্য ও ঔষধের ঘাটতির কারণে লক্ষ লক্ষ বাসিন্দার বাস্তুচ্যুতির দিকে পরিচালিত করেছে। দামেস্কে ড্রুজ উপজাতির নেতা স্বাধীনতার পক্ষে আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছেন, যেখানে অবরোধ তুলে নেওয়া এবং বাণিজ্যিক কার্যকলাপ পুনরুদ্ধারের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে, যা সৌদি মানবাধিকার সংস্থাগুলির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে। হোয়াইট হেলমেটসের সহায়তায় সিরিয়া-জর্ডান সীমান্ত দিয়ে কিছু সাহায্য শহরে প্রবেশ করলেও, সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস অনুসারে, ড্রুজ এবং অন্যান্য কর্মীরা আরও টেকসই সমাধানের জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। এই বিক্ষোভ একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে সৌদি নাগরিকরা তাদের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা এবং 'পূর্বের প্রতিবেদন করার অধিকার' সম্পর্কে ক্রমবর্ধমানভাবে সোচ্চার হচ্ছেন, যা গুরুতর মানবিক ও মানব নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে রয়েছে।
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে যে ১৩ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট, ২০২৫ সালের মধ্যে শুধুমাত্র সুওয়াইদা প্রদেশে ১০১৩ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বেসামরিক নাগরিক। এটি চলমান সংকটের তীব্রতা তুলে ধরে। উপরন্তু, ইউনিসেফ জানিয়েছে যে ১৩ আগস্ট, ২০২৫ পর্যন্ত সিরিয়ার আস-সুওয়াইদা প্রদেশে ঘটে যাওয়া সহিংসতায় কমপক্ষে ২২ জন শিশু নিহত এবং ২১ জন আহত হয়েছে, যার ফলে বেসামরিক অবকাঠামোর উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে এবং মানবিক প্রতিক্রিয়া প্রচেষ্টা ব্যাহত হয়েছে। জল ও বিদ্যুতের মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং খাদ্য ও ঔষধের মতো অত্যাবশ্যকীয় সরবরাহ নিরাপত্তাহীনতা ও প্রবেশাধিকারের সীমাবদ্ধতার কারণে দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে। ১৯০,০০০ জনেরও বেশি মানুষ, প্রধানত নারী ও শিশু, বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিস (OCHA) উল্লেখ করেছে যে ৬ আগস্ট, ২০২৫ পর্যন্ত, যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও অব্যাহত থাকা শত্রুতার কারণে সুওয়াইদা এবং প্রতিবেশী প্রদেশগুলিতে ১৯০,০০০ জনেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সুওয়াইদা এবং দামেস্কের মধ্যে প্রধান মহাসড়কটি ১২ জুলাই, ২০২৫ থেকে দুর্গম রয়েছে, যা ত্রাণ সরবরাহকে আরও জটিল করে তুলেছে।