লেবাননের সরকার হিজবুল্লাহকে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ নিরস্ত্রীকরণের একটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই উদ্যোগটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে দেশটির সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সরকারি সূত্রমতে, লেবাননের মন্ত্রিসভা সম্প্রতি একটি মার্কিন প্রস্তাবের মূলনীতি অনুমোদন করেছে, যার লক্ষ্য হলো দেশের সকল অস্ত্রের উপর রাষ্ট্রের একচ্ছত্র অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, লেবাননের সেনাবাহিনী আগামী আগস্ট মাসের শেষ নাগাদ একটি বিস্তারিত বাস্তবায়ন পরিকল্পনা জমা দেবে, যা ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ হিজবুল্লাহর নিরস্ত্রীকরণ সম্পন্ন করার একটি রূপরেখা প্রদান করবে। এই পদক্ষেপটি লেবাননের গৃহযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অস্ত্র রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনার একটি ঐতিহাসিক প্রচেষ্টা, যেখানে হিজবুল্লাহ ব্যতীত প্রায় সকল গোষ্ঠী তাদের অস্ত্র সমর্পণ করেছিল।
তবে, এই পরিকল্পনাটি হিজবুল্লাহর তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছে। গোষ্ঠীটি এই প্রস্তাবকে "গুরুতর পাপ" হিসেবে আখ্যায়িত করেছে এবং ইসরায়েলের দখলকৃত অঞ্চল থেকে সম্পূর্ণ প্রত্যাহার ও বিমান হামলা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত নিরস্ত্রীকরণ সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে। হিজবুল্লাহর মন্ত্রীরা এবং তাদের মিত্ররা মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ওয়াকআউট করেছেন, যা সরকারের মধ্যে বিভেদ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার ইঙ্গিত দেয়। ইরান, হিজবুল্লাহর প্রধান সমর্থক, এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে এবং বলেছে যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিজবুল্লাহর হাতেই থাকবে। এই পরিকল্পনার পর্যায়ক্রমিক বাস্তবায়নের মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলের লেবাননের ভূমি থেকে ধীরে ধীরে প্রত্যাহার, লেবাননের বন্দীদের মুক্তি এবং হিজবুল্লাহর ভারী অস্ত্র, যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন, রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনা। এই প্রক্রিয়াটি চারটি ধাপে সম্পন্ন করার প্রস্তাব করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বন্ধ করা এবং লেবাননের অবকাঠামো পুনর্গঠনের জন্য আন্তর্জাতিক তহবিল সংগ্রহ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হবে। হিজবুল্লাহ লেবাননের রাজনীতি ও নিরাপত্তায় একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি এবং তাদের নিরস্ত্রীকরণ কেবল একটি সামরিক বিষয় নয়, বরং একটি গভীর রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রশ্ন। লেবাননের সেনাবাহিনী, যা বর্তমানে আন্তর্জাতিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল, তার এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদনের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সম্প্রতি, southern Lebanon-এর একটি অস্ত্রাগারে বিস্ফোরণে ছয়জন লেবাননের সৈন্য নিহত হয়েছেন, যখন তারা হিজবুল্লাহর অবকাঠামো নিষ্ক্রিয় করার কাজ করছিলেন। এই ঘটনাটি নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়ার অন্তর্নিহিত ঝুঁকি এবং জটিলতাগুলোকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। এই পরিস্থিতি লেবাননকে একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড় করিয়েছে। একদিকে আন্তর্জাতিক চাপ, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধ – এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে একটি স্থিতিশীল ও সার্বভৌম রাষ্ট্র গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জ সামনে। এই উদ্যোগের সাফল্য কেবল লেবাননের ভবিষ্যৎকেই নয়, বরং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাকেও প্রভাবিত করবে।