জার্মানি তার বৈদেশিক, নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে আরও সুসংহত ও ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে একটি জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ (NSR) প্রতিষ্ঠা করেছে। এই পরিষদটি সমস্ত প্রাসঙ্গিক তথ্য ও বিশ্লেষণকে একত্রিত করবে, যা সরকারকে সংকটকালীন পরিস্থিতিতে আরও দ্রুত ও কার্যকরভাবে পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করবে। চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মের্জ এই পরিষদের সভাপতিত্ব করবেন এবং এতে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, অর্থ, অর্থনৈতিক বিষয়ক, বিচার, উন্নয়ন এবং ডিজিটাল মন্ত্রণালয় সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের মন্ত্রীরা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। আগামী অক্টোবর ২০২৫ থেকে এই পরিষদ তার কার্যক্রম শুরু করবে।
এই জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত জার্মানির নিরাপত্তা কাঠামোকে শক্তিশালী করার একটি ধারাবাহিক উদ্যোগের অংশ। এর আগে, ২০২৫ সালের মে মাসে, চ্যান্সেলর মের্জ এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করার জন্য একটি যৌথ প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা পরিষদ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এই পরিষদটি রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান হুমকি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতির অনিশ্চয়তার মুখে অভিন্ন কৌশলগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কার্যকর সমাধান প্রদানে সচেষ্ট থাকবে। এছাড়াও, ২০২৫ সালের জুন মাসে, হেগে অনুষ্ঠিত ন্যাটো সম্মেলনে চ্যান্সেলর মের্জ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তায় জার্মানির অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন এবং ইউরোপের মধ্যে জার্মানির বুন্দেসওয়েরকে (Bundeswehr) সবচেয়ে শক্তিশালী প্রচলিত সেনাবাহিনীতে পরিণত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেন। জার্মানির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ প্রতিষ্ঠা দেশটির নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে একটি সমন্বিত এবং সক্রিয় দৃষ্টিভঙ্গির দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বৈদেশিক, নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে কেন্দ্রীভূত করা এবং মূল মন্ত্রিপরিষদগুলোর অন্তর্ভুক্তি জটিল ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারের প্রতিশ্রুতিকে নির্দেশ করে। এই পদক্ষেপ ইউরোপীয় দেশগুলোর সম্মিলিত নিরাপত্তা জোরদার করার বৃহত্তর প্রচেষ্টার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, যা ফ্রান্সের সাথে যৌথ পরিষদের মাধ্যমেও স্পষ্ট। প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি এবং বুন্দেসওয়েরকে শক্তিশালী করার উচ্চাকাঙ্ক্ষা ইউরোপীয় এবং ট্রান্সআটলান্টিক নিরাপত্তা কাঠামোতে জার্মানির পরিবর্তিত ভূমিকা ও দায়িত্বকে আরও দৃঢ় করে। এই উন্নয়নগুলির সময়কাল, বিশেষ করে অনুভূত হুমকি এবং ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে, এই সংস্কারগুলির তাৎক্ষণিকতা এবং কৌশলগত গুরুত্বকে তুলে ধরে। এই নতুন পরিষদ জার্মানির নিরাপত্তা নীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে। এটি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে একটি সামগ্রিক নিরাপত্তা চিত্র তৈরি করবে, যা সংকট মোকাবেলায় জার্মানির সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। এই উদ্যোগটি জার্মানির দীর্ঘদিনের আলোচনা এবং প্রয়োজনের ফলস্বরূপ, যা দেশটির প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা নীতিতে একটি নতুন যুগের সূচনা করবে। ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে জার্মানির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই পরিষদের কার্যপ্রণালী চূড়ান্ত করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।