জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল

সম্পাদনা করেছেন: S Света

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা হয়েছে। ২০১৫ সালের জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন (JCPOA) চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া এবং ইরানের পারমাণবিক প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থতার পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানি (E3) আগস্ট ২০২৫-এ ইরানের JCPOA লঙ্ঘনের অভিযোগের ভিত্তিতে "স্ন্যাপব্যাক" প্রক্রিয়া শুরু করে। এই প্রক্রিয়ার ৩০ দিনের মধ্যে নিরাপত্তা পরিষদ নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল না করার পক্ষে কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করতে ব্যর্থ হলে, পূর্ববর্তী নিষেধাজ্ঞাগুলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হয়। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, নিরাপত্তা পরিষদ এই নিষেধাজ্ঞাগুলির পুনর্বহাল রোধ করতে ব্যর্থ হয়, যার ফলে ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে এগুলি কার্যকর হয়।

এই নিষেধাজ্ঞাগুলি, যা পূর্বে ২০১৫ সালের চুক্তির অধীনে প্রত্যাহার করা হয়েছিল, তাতে সম্পদ জব্দ, অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র নিষেধাজ্ঞা এবং ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির উপর বিধিনিষেধ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি এই নিষেধাজ্ঞাগুলিকে "অন্যায় এবং ভিত্তিহীন" বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন যে ইরান তার জাতীয় অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করার জন্য উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া জানাবে। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন যে ইরানের পারমাণবিক কার্যকলাপের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ এবং যদি কোনও চুক্তি না হয় তবে অবিলম্বে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা উচিত।

এই নিষেধাজ্ঞাগুলির ফলে ইরানের অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। পূর্বের নিষেধাজ্ঞাগুলির পাশাপাশি, এই নতুন জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞাগুলি আন্তর্জাতিকভাবে আরও বেশি বৈধতা বহন করে, যা বিশ্বব্যাপী সরকার, বীমাকারী এবং ব্যাংকগুলির উপর আরও ব্যাপক সম্মতি চাপিয়ে দেবে। এর ফলে ইরানের তেল রপ্তানি, আন্তর্জাতিক অর্থায়ন এবং বাণিজ্য আরও কঠিন হয়ে পড়বে। ঐতিহাসিকভাবে, ২০০৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির উপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। ২০১৫ সালে JCPOA স্বাক্ষরের পর এই নিষেধাজ্ঞাগুলি প্রত্যাহার করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর নিষেধাজ্ঞাগুলি পুনরায় আরোপ করা হয়। বর্তমানে, জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল ইরানের উপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি করেছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছে।

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির উপর আন্তর্জাতিক নজরদারি দশক ধরে চলে আসছে। যদিও ইরান দাবি করে যে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে, তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলি, এই কর্মসূচির সামরিক ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলি এই উদ্বেগগুলিরই প্রতিফলন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণের একটি প্রচেষ্টা।

উৎসসমূহ

  • Bloomberg Business

  • UN Security Council Nixes Resolution to Halt Reimposition of Sanctions Against Iran

  • European countries to notify U.N. of ‘snapback’ sanctions on Iran

  • European powers threaten 'snapback sanctions' on Iran

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।