ইরানের পারমাণবিক চুক্তি লঙ্ঘন: জাতিসংঘের 'স্ন্যাপব্যাক' নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার পথে ইউরোপীয় ইউনিয়ন

সম্পাদনা করেছেন: Татьяна Гуринович

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলো, বিশেষ করে ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্য (E3), ইরানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের 'স্ন্যাপব্যাক' প্রক্রিয়া সক্রিয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই পদক্ষেপটি ২০১৫ সালের জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন (JCPOA) বা ইরানের পারমাণবিক চুক্তি লঙ্ঘনের প্রতিক্রিয়ায় নেওয়া হয়েছে। E3 দেশগুলো ২৮ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে এই প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যা আগামী ৩০ দিনের মধ্যে জাতিসংঘের পূর্বের নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনরায় আরোপের পথ প্রশস্ত করবে। এই ৩০ দিনের সময়কালে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধান খোঁজার চেষ্টা করা হবে।

ইরানের পারমাণবিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)-এর সাথে সীমিত সহযোগিতা এই সিদ্ধান্তের মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজোলিউশন ২২৩১-এর অধীনে এই 'স্ন্যাপব্যাক' ব্যবস্থাটি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা চুক্তির কোনো পক্ষকে ইরানের অ-সম্মতির ক্ষেত্রে পূর্বের নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনরায় আরোপ করার ক্ষমতা দেয়। এই প্রক্রিয়াটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে নিরাপত্তা পরিষদের কোনো সদস্য দেশ ভেটো দিয়ে এটি আটকাতে না পারে।

ইরান এই পদক্ষেপকে অবৈধ এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে নিন্দা করেছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসমাঈল বাকাই বলেছেন যে ইউরোপীয় পক্ষগুলোর 'স্ন্যাপব্যাক' প্রক্রিয়া শুরু করার কোনো আইনি বা নৈতিক বৈধতা নেই। তিনি আরও বলেন যে ইরান JCPOA-এর প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি বজায় রেখেছে, যেখানে ইউরোপীয় পক্ষগুলো তা করেনি। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তেহরানের উপর চাপ বাড়ানোর পক্ষে ছিল এবং পরোক্ষভাবে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ নিয়ে আলোচনায় জড়িত ছিল।

এই ঘটনাটি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা এবং বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ব্যবস্থার উপর গভীর প্রভাব ফেলবে। ২০১৫ সালের JCPOA চুক্তিটি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার লক্ষ্যে করা হয়েছিল, যার বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তবে, ২০১৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায় এবং ইরানের উপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

ইউরোপীয় দেশগুলো ইরানকে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে এবং IAEA-এর সাথে পূর্ণ সহযোগিতা পুনরায় শুরু করার জন্য সময়সীমা দিয়েছিল। তবে, সম্প্রতি জেনেভায় অনুষ্ঠিত আলোচনায় ইরান থেকে পর্যাপ্ত প্রতিশ্রুতি না পাওয়ায় E3 এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। এই 'স্ন্যাপব্যাক' প্রক্রিয়াটি কার্যকর হলে ইরানের অর্থনীতি এবং সামরিক পরিকাঠামোর উপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। কূটনৈতিক সমাধানের জন্য ৩০ দিনের এই সময়সীমা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এর ফলাফল আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ প্রচেষ্টার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

উৎসসমূহ

  • Al Jazeera Online

  • European nations start process to impose a 'snapback' of Iran nuclear sanctions at UN

  • Iran is facing a return of UN sanctions - what happens now?

  • France, Germany and UK prepare to reimpose sanctions on Iran

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।