ইবিজায় কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সাথে মার্কিন দূত: গাজা শান্তি পরিকল্পনার প্রচেষ্টা

সম্পাদনা করেছেন: Татьяна Гуринович

গাজার যুদ্ধ বন্ধ এবং জিম্মিদের মুক্তির লক্ষ্যে একটি শান্তি পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানির সাথে স্পেনের ইবিজায় এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। এই কূটনৈতিক উদ্যোগটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন ইসরায়েলের গাজা শহর দখলের পরিকল্পনার অনুমোদন এবং এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তীব্র নিন্দা চলছে। আগামী ৯ই আগস্ট, ২০২৫ তারিখে, স্পেনের ইবিজায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে, মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানির সাথে গাজার চলমান সংঘাত নিরসনের জন্য একটি সমন্বিত শান্তি পরিকল্পনা তৈরির উদ্দেশ্যে আলোচনা করেন। এই কূটনৈতিক তৎপরতার মূল লক্ষ্য হলো হামাসের হাতে জিম্মি থাকা সকল ব্যক্তিকে মুক্তি নিশ্চিত করা এবং যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করা।

এই কূটনৈতিক তৎপরতার সমান্তরালে, ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজা শহর দখলের একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন যে ইসরায়েল গাজার উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে চায়, তবে প্রশাসনিক দায়িত্ব অন্য কোনো পক্ষের কাছে হস্তান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। আলোচনা সূত্রে জানা গেছে, মার্কিন প্রশাসন এই সংঘাতের অবসানে কোনো আংশিক বা ধাপে ধাপে চুক্তি নয়, বরং একটি ব্যাপক "সব অথবা কিছুই না" (all or nothing) চুক্তির উপর জোর দিচ্ছে। কাতার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে একটি বিস্তারিত প্রস্তাবনা তৈরির জন্য কাজ করছে, যা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কাছে উপস্থাপন করা হতে পারে। এই প্রচেষ্টায় কাতারের মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা এই জটিল পরিস্থিতিতে আশার আলো দেখাচ্ছে।

ইসরায়েলের গাজা শহর দখলের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিন্দা অব্যাহত রয়েছে। জাতিসংঘ এই পদক্ষেপকে একটি "বিপজ্জনক উত্তেজনা বৃদ্ধি" হিসেবে অভিহিত করেছে এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। জার্মানি, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স এবং কানাডার মতো দেশগুলো তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং ইসরায়েলকে আরও সামরিক পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষত, জার্মানি গাজায় ব্যবহার করা যেতে পারে এমন কোনো সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি স্থগিত করেছে, যা এই আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার গভীরতা নির্দেশ করে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেছেন যে ইসরায়েলের এই পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক আইন এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের নীতির পরিপন্থী। এই পরিস্থিতি কূটনৈতিক প্রচেষ্টার কার্যকারিতা এবং গাজার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। তবে, এই ধরনের আলোচনা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত প্রতিক্রিয়া একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের সম্ভাবনাকে তুলে ধরে, যেখানে সংঘাতের পরিবর্তে সংলাপের মাধ্যমে সমাধান খোঁজার একটি সুযোগ তৈরি হয়।

এই জটিল ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে, যেখানে সামরিক পদক্ষেপের পরিকল্পনা এবং কূটনৈতিক সমাধানের প্রচেষ্টা পাশাপাশি চলছে, ইবিজায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠকটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। বিশ্ব আশা করছে যে আলোচনার মাধ্যমে একটি স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে, যা এই অঞ্চলের মানুষের জন্য একটি উন্নত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবে।

উৎসসমূহ

  • Bild

  • Axios

  • DW

  • DW

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।