দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে-মিউং জাপানের সঙ্গে সম্পর্ককে 'অপরিহার্য অংশীদারিত্ব' হিসেবে অভিহিত করেছেন, যা দুই দেশের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য কূটনৈতিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। ১৫ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে কোরিয়ার জাপানি ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তির ৮০তম বার্ষিকীতে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এই মন্তব্য করেন। এই ঘোষণাটি জাপানের প্রধানমন্ত্রী শighederু ইশিবা এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার আসন্ন বৈঠকের পূর্বেই আসে, যেখানে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও স্থিতিশীলতার উপর জোর দেওয়া হবে। প্রেসিডেন্ট লি পূর্বে জাপানের প্রতি কঠোর মনোভাব পোষণ করলেও, এখন তিনি পারস্পরিক সুবিধা এবং ভবিষ্যৎ-মুখী সহযোগিতার উপর জোর দিচ্ছেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, ২০২৫ সাল দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৬০তম বার্ষিকী, যা অতীতকে স্বীকার করে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটি সুযোগ। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে জাপান অতীতের বেদনাদায়ক ইতিহাসকে স্বীকার করবে এবং দুই দেশের মধ্যে আস্থা বজায় রাখতে সচেষ্ট হবে।
এই কূটনৈতিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে, প্রেসিডেন্ট লি ২৩-২৪ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে টোকিওতে প্রধানমন্ত্রী ইশিবের সাথে একটি শীর্ষ সম্মেলনে মিলিত হবেন। এরপর তিনি ওয়াশিংটন ডিসি-তে ২৫ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাৎ করবেন। এই বৈঠকগুলো পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়াও, প্রেসিডেন্ট লি উত্তর কোরিয়ার সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক চুক্তি, যা ২০১৮ সালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তা পুনরায় সক্রিয় করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। এই পদক্ষেপটি সীমান্ত উত্তেজনা কমাতে এবং পিয়ংইয়ং-এর সাথে পুনরায় আলোচনা শুরু করার একটি প্রচেষ্টা। পূর্ববর্তী রক্ষণশীল সরকার এই চুক্তিটি স্থগিত করেছিল, কিন্তু লি-এর প্রশাসন এটিকে উত্তেজনা প্রশমনের একটি উপায় হিসেবে দেখছে। অর্থনৈতিকভাবে, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে। উভয় দেশই উন্নত প্রযুক্তি পণ্যগুলির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপকে প্রধান বাজার হিসেবে লক্ষ্য করছে। কিছু বিশ্লেষক উভয় দেশের মধ্যে একটি 'কোরিয়া-জাপান অর্থনৈতিক ইউনিয়ন' গঠনের ধারণাও তুলে ধরেছেন, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো একটি অর্থনৈতিক সম্প্রদায় তৈরি করতে পারে। এই ধারণাটি উভয় দেশের বয়স্ক জনসংখ্যা এবং সঙ্কুচিত ভোক্তা বাজারকে প্রসারিত করার এবং যৌথভাবে তেল ও এলএনজি-র মতো সম্পদ ক্রয় করে কম দামে কেনার সুযোগ তৈরি করতে পারে। প্রেসিডেন্ট লি-এর এই নতুন নীতিগুলি পূর্ব এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। ঐতিহাসিক মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি সমন্বিত ও বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করার মাধ্যমে তিনি একটি নতুন যুগের সূচনা করছেন।