মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউরোপীয় কনভেনশন ফর দ্য প্রিভেনশন অফ টর্চার (CPT) থেকে প্রত্যাহারের আইনে স্বাক্ষর করেছেন। এই পদক্ষেপটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নির্দেশ করে, বিশেষ করে আটক কেন্দ্রগুলিতে বন্দীদের প্রতি আচরণের বিষয়ে। যদিও রাশিয়া এই আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে, তবে দেশটির অভ্যন্তরীণ আইন অনুযায়ী নির্যাতন ও নিষ্ঠুর আচরণ এখনও নিষিদ্ধ।
এই প্রত্যাহারের প্রক্রিয়াটি বেশ কিছুদিন ধরেই চলছিল। ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে, রাষ্ট্রীয় ডুমা (State Duma) সর্বসম্মতিক্রমে এই বিলটি অনুমোদন করে। এরপর ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে ফেডারেশন কাউন্সিল (Federation Council) এটিকে সমর্থন জানায়। এই কনভেনশনটি ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং ১৯৯৮ সালে কার্যকর হয়। এর অধীনে, CPT-এর বিশেষজ্ঞরা পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বিভিন্ন আটক কেন্দ্রে পরিদর্শন করতে পারতেন এবং সেখানকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করতেন। তবে, ২০২২ সালে ইউরোপীয় কাউন্সিল (Council of Europe) থেকে রাশিয়া বহিষ্কৃত হওয়ার পর থেকে CPT-তে রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। বিলটির সাথে সংযুক্ত একটি ব্যাখ্যামূলক নোটে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০২৩ সাল থেকে CPT-তে রাশিয়ার কোনো প্রতিনিধি ছিল না, কারণ ইউরোপীয় কাউন্সিল রাশিয়ার পক্ষ থেকে নতুন সদস্য নির্বাচনের প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছিল।
এই আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ালেও, রাশিয়ার আইন অনুযায়ী নির্যাতন এখনও একটি গুরুতর অপরাধ। রাশিয়ার সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদ ব্যক্তিগত মর্যাদা রক্ষা এবং নির্যাতন, নিষ্ঠুর বা অবমাননাকর আচরণ নিষিদ্ধ করে। এছাড়াও, ২০২২ সালে রাশিয়ার ফৌজদারি আইনের ২৮৬ অনুচ্ছেদে 'নির্যাতন' শব্দটির সংজ্ঞা স্পষ্ট করা হয়েছে এবং এর প্রয়োগের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
রাশিয়ার মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য ইভা মেরকাচেভা (Eva Merkacheva) বলেছেন যে, এই প্রত্যাহার মানে এই নয় যে দেশে নির্যাতন বৈধতা পাবে। রাশিয়ার আইন অনুযায়ী এটি এখনও নিষিদ্ধ। অন্যদিকে, 'কমিটি অ্যাগেইনস্ট টর্চার'-এর প্রধান সের্গেই বাবিনেটস (Sergey Babinets) মনে করেন যে, এই পদক্ষেপটি আন্তর্জাতিক চুক্তি মেনে চলার ক্ষেত্রে রাশিয়ার অনীহার একটি অংশ এবং এটি মানবাধিকার পর্যবেক্ষণে বাহ্যিক নজরদারি হ্রাস করতে পারে। এই প্রত্যাহারের ফলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষণে কী প্রভাব পড়বে এবং CPT-এর নজরদারি ছাড়াই রাশিয়া কীভাবে তার নাগরিকদের আটক কেন্দ্রগুলিতে সুরক্ষা নিশ্চিত করবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও অভ্যন্তরীণ আইন শক্তিশালী রয়েছে, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের অনুপস্থিতিতে এর কার্যকারিতা একটি বড় উদ্বেগের বিষয়।