১০ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী রাশিয়ার সারাতভ অঞ্চলে একটি তেল শোধনাগারে সফল ড্রোন হামলার কথা জানিয়েছে। ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ এই হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে, যেখানে স্থাপনাটিতে বিস্ফোরণ ও আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এই শোধনাগারটি গ্যাসোলিন, ফুয়েল অয়েল এবং ডিজেল ফুয়েলের একটি প্রধান উৎপাদক এবং এটি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে অভিযানে নিয়োজিত রুশ সামরিক ইউনিটগুলিতে জ্বালানি সরবরাহ করে থাকে। এই পদক্ষেপটি রাশিয়ার জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত করার এবং এর সামরিক সক্ষমতা হ্রাস করার ইউক্রেনের বৃহত্তর কৌশলের অংশ। রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে এই হামলায় একজন নিহত এবং বেশ কয়েকটি আবাসিক অ্যাপার্টমেন্ট ও একটি শিল্প স্থাপনার ক্ষতি হয়েছে। গভর্নর রোমান বুসারগিন বলেছেন যে ধ্বংস হওয়া একটি ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ তিনটি অ্যাপার্টমেন্টে আঘাত হানার পর বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে ঘটনাস্থলে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে এবং একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে যে তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাতে ১২১টি ইউক্রেনীয় ড্রোন নিষ্ক্রিয় করেছে, যার মধ্যে আটটি সারাতভ অঞ্চলের উপরে ছিল। এই ঘটনাটি ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে ক্রমবর্ধমান আকাশপথে আদান-প্রদানের চিত্র তুলে ধরেছে, যেখানে উভয় দেশই গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করছে।
চার বছর ধরে চলা এই সংঘাতের মানবিক ও ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব অব্যাহত রয়েছে। যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদার হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৫ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে আলাস্কায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে সাক্ষাৎ করবেন, যার লক্ষ্য যুদ্ধ শেষ করা। ইউরোপীয় নেতারা আসন্ন সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জোর দিয়ে বলেছেন যে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ ইউক্রেনীয়দের দ্বারাই নির্ধারিত হওয়া উচিত এবং যেকোনো শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি অপরিহার্য। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলা রাশিয়ার জ্বালানি অবকাঠামোতে প্রায় ১০-১৭% পরিশোধন ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যা মস্কোকে কম লাভজনক অপরিশোধিত তেল রপ্তানির দিকে ঠেলে দিয়েছে। এই হামলাগুলি রাশিয়ার সামরিক লজিস্টিকস এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ব্যাহত করেছে, যা ন্যাটোকে ২০৩৫ সালের মধ্যে জিডিপি-র ৫% প্রতিরক্ষা ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি দিতে উৎসাহিত করেছে। এই পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সতর্কতার সাথে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা সমুন্নত রেখে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে সওয়াল করছে। এই ধরনের আক্রমণ রাশিয়ার অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে, যেখানে জ্বালানি সরবরাহের ধারাবাহিকতা ব্যাহত হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এর প্রভাব পড়ছে। এই ঘটনাগুলি যুদ্ধের কৌশলগত দিকটিকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে, যেখানে উভয় পক্ষই প্রতিপক্ষের দুর্বল স্থানগুলিতে আঘাত হানার চেষ্টা করছে।