ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে নিরাপত্তা বিষয়ক আলোচনার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শর্তহীন বৈঠকে বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এই পদক্ষেপটি চলমান সংঘাত নিরসনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির বৈঠকের পর, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ নিশ্চিত করেছেন যে পুতিন আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করতে রাজি হয়েছেন। ক্রেমলিনের একজন কূটনৈতিক উপদেষ্টাও পুতিনের আলোচনার জন্য উন্মুক্ত থাকার বিষয়টি জানিয়েছেন। জেলেনস্কি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পুতিনের সঙ্গে একটি উচ্চ-পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের জন্য তার প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করেছেন, যদিও নির্দিষ্ট কোনো তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। এটি প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর দুই নেতার প্রথম বৈঠক হবে।
জেলেনস্কি বলেছেন যে তিনি পুতিনের সাথে "শর্তহীনভাবে" দেখা করতে প্রস্তুত এবং প্রাথমিক বৈঠকের ফলাফলের উপর নির্ভর করে ট্রাম্প আলোচনায় যোগ দিতে পারেন। যুদ্ধ প্রায় তিন বছর ধরে চলছে এবং সম্প্রতি রাশিয়ার কিছু অগ্রগতির খবর পাওয়া গেলেও, পূর্বের ট্রাম্প-পুতিন শীর্ষ বৈঠক কোনো যুদ্ধবিরতি আনতে পারেনি। ট্রাম্পের পক্ষ থেকে রাশিয়ার কাছে ছাড় দেওয়ার চাপের পরেই জেলেনস্কির ওয়াশিংটন সফর অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, ফিনল্যান্ড, ইউরোপীয় কমিশন এবং ন্যাটোর নেতারা জেলেনস্কির সাথে ছিলেন, যা ইউক্রেনের প্রতি তাদের সমর্থনের ইঙ্গিত দেয়।
জেলেনস্কি ট্রাম্পের সাথে তার ব্যক্তিগত বৈঠককে এখন পর্যন্ত "সেরা" বলে বর্ণনা করেছেন, যেখানে ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স প্রকাশ্যে জেলেনস্কির সমালোচনা করার আগের বৈঠকের তুলনায় একটি শিথিল পরিবেশ ছিল। ট্রাম্প জানিয়েছেন যে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং পুতিন তা গ্রহণ করেছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই ঘটনাপ্রবাহ সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করছে, এই সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের আশায়।
২০০২ সালে ইউক্রেন পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগ করার বিনিময়ে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পেয়েছিল, কিন্তু এই চুক্তি রাশিয়ার আগ্রাসন থামাতে পারেনি। এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ইউক্রেনের জন্য আরও শক্তিশালী নিশ্চয়তার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। ইউরোপীয় নেতারা ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছেন, যার মধ্যে ন্যাটো-র আর্টিকেল ৫-এর মতো সুরক্ষা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। তবে, এই নিশ্চয়তাগুলি কীভাবে কাজ করবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কী হবে তা এখনও অস্পষ্ট। ইউক্রেন একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী বজায় রাখার উপর জোর দিয়েছে, যা রাশিয়ার বর্তমান দাবির পরিপন্থী। এই কূটনৈতিক প্রচেষ্টাগুলি একটি দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার দিকে একটি আশাব্যঞ্জক পদক্ষেপ, তবে এর সাফল্য এখনও অনিশ্চিত।
প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে, রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ এলাকা দখল করে রেখেছে। এই সংঘাতের ফলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেসামরিক হতাহত এবং বাস্তুচ্যুত জনসংখ্যা তৈরি হয়েছে।