গ্রীসের শ্রম মন্ত্রণালয় কর্মীদের জন্য দৈনিক ১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করার অনুমতি দেওয়ার একটি প্রস্তাবনা পেশ করেছে, যা দেশের কর্মসংস্কৃতিতে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে। এই প্রস্তাবটি জুলাই ২০২৫-এ উপস্থাপিত হয় এবং এটি শ্রম আইন আধুনিকীকরণের সরকারি প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, কর্মীরা একই নিয়োগকর্তার অধীনে বছরে ৩৭ দিন পর্যন্ত এই বর্ধিত সময় কাজ করার সুযোগ পাবেন। শ্রমমন্ত্রী নিকি কেরামোস জানিয়েছেন যে, এই ১৩-ঘণ্টার কর্মদিবস হবে ঐচ্ছিক এবং কর্মীদের অতিরিক্ত সময় কাজ করতে বাধ্য করা হবে না। এই সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য হলো বর্তমান বাজারের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শ্রম আইনকে আধুনিকীকরণ করা। এই উদ্যোগের প্রতিক্রিয়ায়, ১ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে একটি সাধারণ ধর্মঘট ঘোষণা করা হয়েছিল।
প্রস্তাবটিতে ছুটির দিনে নমনীয়তা, স্বল্পমেয়াদী অতিরিক্ত দৈনিক কাজের সুযোগ এবং একটি অ্যাপের মাধ্যমে কর্মীদের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, পাশাপাশি অ্যাপের মাধ্যমে প্রতিদিন অতিরিক্ত ১২০ মিনিট উপলব্ধতার প্রবর্তনও রয়েছে। এমনকি, সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজের বিনিময়ে চার দিনের কর্মসপ্তাহের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে, গ্রীক শ্রমিক ইউনিয়নগুলো এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করছে। তাদের আশঙ্কা, এটি কর্মীদের শোষণ বাড়াবে এবং জীবনযাত্রার মানকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। গ্রীক শ্রমিকদের সাধারণ কনফেডারেশন (GSEE) জানিয়েছে যে, ক্লান্তি কোনো অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নয় এবং মানুষের সহ্যেরও সীমা রয়েছে। সরকার এই পদক্ষেপকে আধুনিকীকরণ এবং কর্মী ঘাটতি (পর্যটন ও আতিথেয়তার মতো খাতে প্রায় ৮০,০০০ শূন্যপদ) সমাধানের উপায় হিসেবে দেখছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গ্রীক শ্রমিকরা ইউরোপের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বছরে গড়ে ১,৮৮৬ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন, যা তাদের ক্রয়ক্ষমতাকে ইউরোপীয় গড় থেকে ৩০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, কর্মদিবস বাড়ানোর এই প্রস্তাবকে অনেকে 'মধ্যযুগীয়' ব্যবস্থার দিকে প্রত্যাবর্তন হিসেবে দেখছেন এবং এটি মুক্ত যৌথ দর কষাকষির ক্ষমতাকে খর্ব করবে বলে মনে করছেন। থ্রেসের ডেমোক্রিটাস বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রম সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক থিওডোরোস কৌতরাউকিস মনে করেন, এই নতুন আইন শ্রম বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ এটি কর্মীদের কাজের প্রতি সন্তুষ্টি কমিয়ে দেবে এবং সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা হ্রাস করবে।
যখন অনেক ইউরোপীয় দেশ ৩৭.৫ ঘণ্টার কর্মসপ্তাহের দিকে এগোচ্ছে, তখন গ্রীসের এই প্রস্তাব বিপরীতমুখী বলে মনে হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, ইউনিয়নগুলো ৩৭.৫ ঘণ্টার কর্মসপ্তাহে হ্রাস এবং সম্মিলিত চুক্তির পুনরুদ্ধারের উপর জোর দিচ্ছে। এই বিতর্ক কেবল গ্রীসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিশ্বজুড়ে কর্ম-জীবনের ভারসাম্য, বর্ধিত কর্মঘণ্টার প্রভাব এবং শ্রম অধিকার ও অর্থনৈতিক আধুনিকীকরণের মধ্যেকার টানাপোড়েন নিয়ে চলমান আলোচনারই একটি প্রতিচ্ছবি। গ্রীসের বর্তমান পরিস্থিতি, যেখানে কর্মীরা ইতিমধ্যেই দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছেন এবং তুলনামূলকভাবে কম উৎপাদনশীলতা ও ক্রয়ক্ষমতার সম্মুখীন, সেখানে কর্মদিবস বাড়ানোর এই প্রস্তাবটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করে: শ্রমিকের কল্যাণ নিশ্চিত করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন কি সম্ভব নয়? এই প্রস্তাবনাটি গ্রীসের শ্রম বাজারে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে, যার ফলাফল আগামী দিনে স্পষ্ট হবে।
মেট্রন অ্যানালাইসিসের জরিপ অনুযায়ী, জনমতও কাজের সময় কমানোর পক্ষে। ৯৪% কর্মী বেতন অপরিবর্তিত রেখে কাজের সময় কমানোর পক্ষে এবং ৫৬% ১৩-ঘণ্টার কর্মদিবসের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। বেশিরভাগ উত্তরদাতা মনে করেন যে, কাজের সময় কমানো পারিবারিক ও সামাজিক জীবন, সেইসাথে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।