আগস্ট ২০২৫-এ হামাস মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব গ্রহণ করে, যার লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলি জিম্মি এবং ফিলিস্তিনি বন্দীদের বিনিময় করা। তবে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন, এটিকে অগ্রহণযোগ্য বলে অভিহিত করেন এবং হামাসের নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
একই সময়ে, গাজায় একটি ভয়াবহ মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের সমর্থিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (IPC) গাজা গভর্নরেটে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে এই ধরনের প্রথম ঘোষণা। আইপিসি রিপোর্ট করেছে যে গাজার অর্ধেকেরও বেশি মানুষ বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে এবং সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ একই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে।
যুক্তরাজ্য মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছে, যার মধ্যে গুরুতর অসুস্থ শিশুদের যুক্তরাজ্যের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি ইসরায়েলের সহায়তা বিধিনিষেধের সমালোচনা করেছেন, পরিস্থিতিকে মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ বলে অভিহিত করেছেন এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্য অতিরিক্ত ১৫ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) চিকিৎসা সহায়তাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এই যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া নিয়ে অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ প্রদর্শন করেছে, যেখানে কিছু সদস্য রাষ্ট্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের পক্ষে, যেমন একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্থগিত করা, আবার অন্যরা এই ধরনের পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে। এই ঐকমত্যের অভাব ইইউ-এর আন্তর্জাতিক অবস্থানকে দুর্বল করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫ পর্যন্ত, গাজার মানবিক পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর রয়ে গেছে, যেখানে যুদ্ধবিরতি এবং বর্ধিত সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক আবেদন অব্যাহত রয়েছে। এই সংঘাতের ফলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অক্টোবর ২০২৩ থেকে এ পর্যন্ত ৬৩,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তা মূল্যায়ন অনুসারে, গাজার উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষ নিশ্চিত করা হয়েছে এবং সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ এটি দক্ষিণাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিকে 'মানবতার ব্যর্থতা' হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্য সরকার গাজায় মানবিক সহায়তা প্রদান করে চলেছে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে, যুক্তরাজ্য অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলিতে ১২৯ মিলিয়ন পাউন্ড সহায়তা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে UNRWA-এর জন্য ৩৪ মিলিয়ন পাউন্ড অন্তর্ভুক্ত। ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ, যুক্তরাজ্যের রয়্যাল এয়ার ফোর্স জর্ডানের রয়্যাল এয়ার ফোর্সের সহায়তায় গাজার উত্তরাঞ্চলে বিমানযোগে সহায়তা সরবরাহ শুরু করেছে, যা স্থল বা সমুদ্রপথে দুর্গম।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি ইসরায়েলের সহায়তা বিধিনিষেধের তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং এটিকে 'মানবসৃষ্ট বিপর্যয়' বলে অভিহিত করেছেন। তিনি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে। স্পেন এবং আয়ারল্যান্ডের মতো কিছু দেশ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানালেও জার্মানি এবং হাঙ্গেরির মতো দেশগুলি এই ধরনের পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে। এই বিভাজন ইইউ-এর আন্তর্জাতিক অবস্থানকে দুর্বল করছে। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ইউরোপের প্রতিক্রিয়াকে 'ব্যর্থতা' বলে অভিহিত করেছেন এবং গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।