আমেরিকার এইচ-১বি (H-1B) ভিসা প্রক্রিয়ায় একটি বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন, যা ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ থেকে কার্যকর হয়েছে। এই নতুন নিয়ম অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থাকা বিদেশী কর্মীদের জন্য নতুন এইচ-১বি ভিসা আবেদনের উপর $১০০,০০০ ডলারের একটি অতিরিক্ত ফি আরোপ করা হয়েছে। এই ফি ভিসা অনুমোদনের পূর্বে পরিশোধ করতে হবে।
এই আকস্মিক পরিবর্তনের ফলে অ্যামাজন, মাইক্রোসফ্ট, মেটা এবং অ্যালফাবেট-এর মতো প্রধান প্রযুক্তি সংস্থাগুলি তাদের এইচ-১বি কর্মীদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকার বা অবিলম্বে ফিরে আসার পরামর্শ দিয়েছে, যাতে পুনরায় প্রবেশে কোনো সমস্যা না হয়। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট স্পষ্ট করেছেন যে এই $১০০,০০০ ডলারের ফি প্রতি আবেদনের জন্য এককালীন পরিশোধযোগ্য এবং এটি বর্তমান ভিসাধারীদের ভ্রমণ বা ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে, শ্রম বিভাগ (Department of Labor) বর্তমানে প্রচলিত বেতন কাঠামো পর্যালোচনা করছে, যা নিয়োগকর্তাদের খরচ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এই নীতিটি প্রাথমিকভাবে ১২ মাসের জন্য প্রযোজ্য হবে, তবে এটি বাড়ানোও হতে পারে।
এই নতুন নিয়মের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষ বিদেশী কর্মীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। বিশেষ করে, প্রযুক্তি খাতের উপর এর গভীর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ এই খাতটি বিদেশী প্রতিভার উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন যে এই অতিরিক্ত ফি অনেক কোম্পানির জন্য, বিশেষ করে ছোট এবং স্টার্টআপগুলির জন্য, এইচ-১বি ভিসা ব্যবহার করা কঠিন করে তুলবে। এর ফলে, মার্কিন কোম্পানিগুলো বিদেশী কর্মী নিয়োগের পরিবর্তে দেশীয় কর্মীদের নিয়োগে বেশি মনোযোগ দিতে পারে অথবা offshoring-এর দিকে ঝুঁকতে পারে।
ভারত থেকে আসা প্রযুক্তি কর্মীদের জন্য এই পরিবর্তনটি বিশেষভাবে উদ্বেগের কারণ হয়েছে, কারণ এইচ-১বি ভিসার প্রায় ৭০% ভারতীয় নাগরিকরাই পেয়ে থাকেন। এই নীতি ভারতীয় আইটি পেশাদার, তাদের পরিবার এবং সামগ্রিক রেমিটেন্সের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও মার্কিন সরকার এই ফি-কে এককালীন বলে স্পষ্ট করেছে, তবুও এই পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে।
এই নতুন নিয়মটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে এবং এটি দেশের প্রযুক্তি খাতের প্রতিযোগিতা ও উদ্ভাবনের উপর কী প্রভাব ফেলবে তা সময়ই বলে দেবে। এই নীতির পাশাপাশি, শ্রম বিভাগ প্রচলিত বেতন কাঠামো (prevailing wage levels) পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছে, যা নিয়োগকর্তাদের জন্য এইচ-১বি কর্মীদের বেতন সংক্রান্ত ব্যয় আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এই পদক্ষেপটি মার্কিন কর্মীদের স্বার্থ রক্ষা এবং এইচ-১বি লটারি সিস্টেমের অপব্যবহার রোধ করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তবে, এই নীতিটি আইনি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন।