নাসার এস্কাপেড (Escape and Plasma Acceleration and Dynamics Explorers) মহাকাশযান দুটি ফ্লোরিডায় ফিরে এসেছে, যা ২০২৫ সালের শেষের দিকে নিউ গ্লেন রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি পর্বের অংশ। এই মিশনের মূল উদ্দেশ্য হলো মঙ্গল গ্রহের পরিবেশ অধ্যয়ন করা। রকেট ল্যাবের তৈরি দুটি অভিন্ন প্রোব নিয়ে এস্কাপেড গঠিত। মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে পৌঁছানোর পর, প্রোব দুটি সেখানকার ম্যাগনেটোস্ফিয়ার, সৌর বায়ু এবং এই কারণগুলির সাথে গ্রহের বায়ুমণ্ডলের মিথস্ক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করবে।
পূর্বে এই মিশনের উৎক্ষেপণ ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নিউ গ্লেন রকেটের প্রথম উড়ানের সাথে নির্ধারিত ছিল। কিন্তু অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির কারণে, নাসা এই পরিকল্পনা স্থগিত করে। উৎক্ষেপণের প্রস্তুতির একদিন আগেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এরপর মহাকাশযান দুটিকে ক্যালিফোর্নিয়ায় রকেট ল্যাবের সদর দফতরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। মঙ্গল গ্রহে যাত্রার জন্য পরবর্তী উপযুক্ত সময়সীমা ডিসেম্বর ২০২৬ সালে শুরু হবে। তবে, নাসা প্রকৌশলীরা একটি ভিন্ন গতিপথ ব্যবহার করে বিকল্প উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা তৈরি করেছেন। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, এস্কাপেডকে প্রাথমিকভাবে সূর্য-পৃথিবী ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট L1-এর কক্ষপথে স্থাপন করা হবে। সেখানে প্রায় এক বছর ধরে মহাকাশ আবহাওয়ার উপর নজর রাখা হবে। মঙ্গল গ্রহে যাত্রার নতুন সময়সীমা খোলার পর, তারা একটি মহাকর্ষীয় চালনা সম্পন্ন করবে এবং পৃথিবীর কাছাকাছি থাকবে। লাল গ্রহে পৌঁছানোর প্রত্যাশা করা হচ্ছে ২০২৭ সালের শীতকালে।
গত ১৬ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে, এস্কাপেড প্রোব দুটিকে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ফ্লোরিডার টিটাসভিল-এর অ্যাস্ট্রোটেক মিশন কন্ট্রোল সেন্টারে পুনরায় নিয়ে আসা হয়। আগামী দিনগুলোতে, রকেট ল্যাবের প্রকৌশলীরা অ্যাস্ট্রোটেকের একটি ক্লিন রুমে মহাকাশযানগুলির পরীক্ষা এবং কার্যকারিতা যাচাই করবেন। এরপর সেগুলোকে উৎক্ষেপণ যানের সাথে একত্রিত করার জন্য প্রস্তুত করা হবে। এস্কাপেড মিশনের জন্য নিউ গ্লেন রকেট ব্যবহার করা হবে, যা এটি মহাকাশে তার প্রথম অভিযান পরিচালনা করবে। বর্তমানে, এর উৎক্ষেপণ ২০২৫ সালের শেষের দিকে পরিকল্পিত।
মঙ্গল গ্রহের চৌম্বকীয় ক্ষেত্র এবং সৌর বায়ুর সাথে এর মিথস্ক্রিয়া নিয়ে গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি গ্রহটির বায়ুমণ্ডল ক্ষয়ের কারণ হতে পারে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, যখন সৌর বায়ুর প্রোটনগুলি সৌর বায়ুর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের সাথে সারিবদ্ধ হয়, তখন মঙ্গল গ্রহের ম্যাগনেটোস্ফিয়ার দুর্বল হয়ে পড়ে, যা বায়ুমণ্ডলের ক্ষয়কে প্রভাবিত করে। এই ঘটনাটি মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডল কীভাবে সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে তা বুঝতে সাহায্য করে।
মঙ্গল গ্রহের এই গবেষণা মিশনের পাশাপাশি, নাসা এবং ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NOAA) সৌর ঝড় এবং মহাকাশ আবহাওয়ার উপর নজরদারির জন্য তিনটি নতুন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। এই স্যাটেলাইটগুলি, যা একটি SpaceX Falcon 9 রকেটে করে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে, পৃথিবী এবং সূর্যের মধ্যবর্তী ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট L1-এ স্থাপন করা হবে। এই অবস্থানটি সৌর ঘটনাগুলি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি কৌশলগত সুবিধা প্রদান করে। এই উদ্যোগটি মহাকাশ আবহাওয়ার পূর্বাভাস উন্নত করতে এবং মহাকাশচারী ও প্রযুক্তিগত পরিকাঠামোকে রক্ষা করতে সহায়ক হবে।