মহাকাশ অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা উন্মোচনের লক্ষ্যে ব্লু অরিজিন তাদের যুগান্তকারী "প্রজেক্ট ওএসিস" (Project Oasis) উদ্যোগের সূচনা করেছে। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো চাঁদ থেকে মূল্যবান সম্পদ চিহ্নিতকরণ, মূল্যায়ন এবং ব্যবহার করা। এই উদ্যোগের প্রথম পর্যায়, "ওসিস-১" (Oasis-1), লুক্সেমবার্গ, তাদের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা, গোমস্পেস (GOMSpace) এবং ইএসআরআইসি (ESRIC)-এর সাথে একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা। এই মিশনটি পানির বরফ, হিলিয়াম-৩, রেডিওনিউক্লাইড, বিরল মৃত্তিকা উপাদান এবং মূল্যবান ধাতু সহ গুরুত্বপূর্ণ চন্দ্র সম্পদের সবচেয়ে বিস্তারিত উচ্চ-রেজোলিউশন মানচিত্র তৈরি করতে চলেছে।
ওসিস-১ মিশনটি উন্নত নিউট্রন স্পেকট্রোস্কোপি প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাঁদের পৃষ্ঠের এক মিটার গভীরতা পর্যন্ত পানির বরফের ঘনত্ব পরিমাপ করবে। এটি অত্যন্ত কম কক্ষপথীয় উচ্চতায় পরিচালিত হবে, যা উচ্চ স্থানিক রেজোলিউশন অর্জনে সহায়তা করবে। এছাড়াও, ধাতব খনিজ শনাক্তকরণের জন্য ম্যাগনেটোমিটার এবং হিলিয়াম-৩ ও ভূতাত্ত্বিক মানচিত্র তৈরির জন্য মাল্টিস্পেকট্রাল ইমেজিংয়ের মতো অতিরিক্ত যন্ত্রাংশও এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
চাঁদের পানি বরফ ব্যবহারের মাধ্যমে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন সমৃদ্ধ রকেট জ্বালানি উৎপাদন সম্ভব হবে। এটি চাঁদকে মহাকাশযানগুলির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রিফুয়েলিং স্টেশন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে, যা পৃথিবীর কক্ষপথ এবং গভীর মহাকাশে যাত্রার জন্য অপরিহার্য। চাঁদের সম্পদ স্থানীয়ভাবে মহাকাশে বিদ্যুৎ উৎপাদন, উন্নত উৎপাদন ব্যবস্থা এবং পরিচ্ছন্ন শক্তি সমাধানেও সহায়ক হবে।
ব্লু অরিজিনের অ্যাডভান্সড কনসেপ্টস অ্যান্ড এন্টারপ্রাইজ ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট প্যাট রেমিয়াস বলেছেন, "যখন আমরা জানতে পারব সেখানে আসলে কী আছে এবং কীভাবে তা ব্যবহার করা যায়, তখন সবকিছু বদলে যাবে।" তিনি আরও যোগ করেন যে, প্রজেক্ট ওএসিস একটি সমৃদ্ধ মহাকাশ অর্থনীতির ভিত্তি তৈরি করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যা পৃথিবীর সকল মানুষের উপকারে আসবে। এই উদ্যোগটি ব্লু এলকেমিস্ট (Blue Alchemist) প্রযুক্তি ব্যবহার করবে, যা চাঁদের রেগোলিথ (Regolith) বা মাটি প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে অক্সিজেন, সৌর কোষ এবং পাওয়ার কেবলের মতো প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরি করতে সক্ষম।
এই সম্মিলিত প্রচেষ্টাগুলি মহাকাশে বৃহৎ আকারের পরিকাঠামো নির্মাণকে লাভজনক এবং সাশ্রয়ী করে তুলবে। এটি মঙ্গল গ্রহ এবং গ্রহাণু থেকে সম্পদ আহরণের ভবিষ্যৎ মিশনগুলিকেও সমর্থন করবে। প্রজেক্ট ওএসিস ব্লু অরিজিনের স্পেস রিসোর্সেস সেন্টার অফ এক্সেলেন্স (Space Resources Center of Excellence) এবং লুক্সেমবার্গের অফিসের মাধ্যমে বিকশিত হচ্ছে। লুক্সেমবার্গের মহাকাশ সংস্থা, গোমস্পেস এবং ইএসআরআইসি এই প্রকল্পে সহায়তা করছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো গভীর মহাকাশ মিশনের খরচ ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো, স্থায়ী চন্দ্র ঘাঁটি স্থাপন এবং সম্পদ উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
এই প্রসঙ্গে, নাসা (NASA)-এর পোলার রিসোর্সেস আইস মাইনিং এক্সপেরিমেন্ট-১ (PRIME-1) ২০২৫ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। এই মিশনটি চাঁদের ভূগর্ভস্থ সম্পদ এবং সম্ভাব্য স্থানগুলি অন্বেষণ করবে। প্রাইম-১-এর যন্ত্রাংশগুলি চাঁদের মাটি আহরণ ও বিশ্লেষণ করে নাসার আর্টেমিস (Artemis) অভিযানের জন্য টেকসই মানব অনুসন্ধানকে সমর্থন করবে। নাসা ১৩টি দলকে তাদের "ব্রেক দ্য আইস লুনার চ্যালেঞ্জ" (Break the Ice Lunar Challenge)-এর মাধ্যমে মোট ৫ লক্ষ ডলার পুরষ্কার প্রদান করেছে। এই প্রতিযোগিতাটি চন্দ্র-খনন প্রযুক্তির উন্নয়নে উৎসাহিত করে।
চাঁদের সম্পদ, বিশেষ করে পানির বরফ আহরণ ও ব্যবহার নাসার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সংস্থাটি এই দশকের শেষ নাগাদ চাঁদে একটি স্থায়ী মানব উপস্থিতি স্থাপনের লক্ষ্যে কাজ করছে। এই বিভিন্ন উদ্যোগগুলি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ক্রমবর্ধমান প্রবণতাকে তুলে ধরে। টেকসই মানব অনুসন্ধান এবং মহাকাশে উন্নয়নের জন্য চাঁদের সম্পদকে কাজে লাগানোর উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।