নাসার পারসিভারেন্স রোভার মঙ্গল গ্রহের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আন্তঃনাক্ষত্রিক ধূমকেতু 3I/ATLAS-এর একটি ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছে। রোভারের রাইট নেভিগেশন ক্যামেরা (Navcam) ২০২৫ সালের ৪ঠা অক্টোবর একটি আলোর রেখা ধারণ করেছে। এই পর্যবেক্ষণটি ধূমকেতুটির মঙ্গলের নিকটতম দূরত্বের সাথে মিলে যায়, যা ২০২৫ সালের ৩রা অক্টোবর ঘটেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি অচলাবস্থার কারণে নাসা বা জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি (JPL) আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত না করলেও, সময় ও স্থান ইঙ্গিত দেয় যে ছবিটি 3I/ATLAS ধূমকেতুকেই দেখাচ্ছে। বর্তমানে নাসা থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যাচ্ছে না।
২০১৯ সালে আবিষ্কৃত 3I/ATLAS ধূমকেতুটি আমাদের সৌরজগতে প্রবেশ করা তৃতীয় পরিচিত আন্তঃনাক্ষত্রিক ধূমকেতু। এটি প্রায় ১৮.৬ মিলিয়ন মাইল (৩০ মিলিয়ন কিলোমিটার) দূর থেকে মঙ্গল গ্রহকে অতিক্রম করেছে। প্রায় ১৩০,০০০ মাইল প্রতি ঘণ্টা (প্রায় ২১০,০০০ কিমি/ঘণ্টা) গতিতে, 3I/ATLAS ধূমকেতুটি বিলিয়ন বছর ধরে আন্তঃনাক্ষত্রিক স্থান অতিক্রম করছে বলে মনে করা হয়। বিজ্ঞানীরা হাবল স্পেস টেলিস্কোপ সহ বিভিন্ন যন্ত্র ব্যবহার করে ধূমকেতুটি পর্যবেক্ষণ করছেন, যা ২০২৫ সালের ২১শে জুলাই 3I/ATLAS-এর ছবি তুলেছিল। হাবলের পর্যবেক্ষণগুলি ধূমকেতুটির বরফময় নিউক্লিয়াসের চারপাশে ধুলোর একটি ফোঁটা-আকৃতির আবরণ প্রকাশ করেছে। এই হাবল চিত্রগুলি ধূমকেতুটির নিউক্লিয়াসের ব্যাসের অনুমানকে পরিমার্জন করতে সাহায্য করেছে, যা প্রায় ৩.৫ মাইল (৫.৬ কিলোমিটার) এর একটি উপরের সীমা স্থাপন করেছে। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের পূর্ববর্তী পর্যবেক্ষণগুলিও ধূমকেতুটির গঠন সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেছে।
পারসিভারেন্সের ছবিতে ধূমকেতুটির যে সিলিন্ডার আকৃতি দেখা যাচ্ছে, তা কম্পোজিট Navcam ছবির জন্য ব্যবহৃত ইন্টিগ্রেশন সময়ের কারণে বলে ব্যাখ্যা করেছেন সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্স | হার্ভার্ড ও স্মিথসোনিয়ান-এর অ্যাভি লোয়েব। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে, মঙ্গল গ্রহের আকাশে ধূমকেতুটি প্রায় ১০ মিনিট ধরে চলার সময় শত শত ছবি একত্রিত করার ফলে এই রেখাটি তৈরি হয়েছে।
বর্তমানে, ২০২৫ সালের ৬ই অক্টোবর পর্যন্ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি অচলাবস্থা চলছে, যা নাসার আনুষ্ঠানিক আপডেট প্রদানের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করছে। পারসিভারেন্স রোভার তার মঙ্গল গ্রহের মিশন চালিয়ে যাচ্ছে। ধূমকেতু 3I/ATLAS পৃথিবীর জন্য কোনো হুমকি নয়, আমাদের গ্রহের সবচেয়ে কাছের দূরত্ব প্রায় ১.৮ জ্যোতির্বিজ্ঞানের একক (প্রায় ১৭০ মিলিয়ন মাইল)। ধূমকেতুটি ২০২৫ সালের ৩০শে অক্টোবর নাগাদ সূর্যের সবচেয়ে কাছের বিন্দুতে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। ধূমকেতুটির পেরিহেলিয়ন ২০২৫ সালের ২৯শে অক্টোবর প্রত্যাশিত। এই ঘটনাটি মহাকাশের বিশালতা এবং আমাদের সৌরজগতের বাইরে থেকে আসা বস্তুর প্রতি মানুষের অদম্য আগ্রহের একটি প্রমাণ। সরকারি অচলাবস্থার মতো বাধা সত্ত্বেও, বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান তার নিজস্ব পথে এগিয়ে চলেছে, যা আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে আরও গভীর জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করছে। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ESA) এবং নাসা বিভিন্ন যন্ত্রের সাহায্যে যৌথভাবে ধূমকেতুটি পর্যবেক্ষণ করছে, যা এই বিরল মহাজাগতিক পরিদর্শককে বোঝার জন্য বৈশ্বিক বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টার উপর আলোকপাত করে।
এই ধরনের পর্যবেক্ষণগুলি কেবল মহাকাশীয় বস্তুর গঠন ও গতিপথ সম্পর্কেই তথ্য দেয় না, বরং আমাদের সৌরজগতের বাইরে জীবনের সম্ভাবনা সম্পর্কেও নতুন প্রশ্ন উত্থাপন করে। সরকারি অচলাবস্থা সত্ত্বেও, মহাকাশ গবেষণা থেমে নেই, এবং পারসিভারেন্স রোভারের মতো যন্ত্রগুলি নতুন তথ্য সংগ্রহ করে চলেছে, যা আমাদের মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচনে সাহায্য করবে।