চীনের মহাকাশযান তিয়ানওয়েন-২ (Tianwen-2) মহাকাশের গভীর থেকে পৃথিবীর এক অসাধারণ ছবি পাঠিয়েছে। এই ছবিটি ১ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে মহাকাশযানের রোবোটিক আর্ম-মাউন্টেড ক্যামেরা দ্বারা তোলা হয়েছে। ছবিতে চীনের পাঁচ-তারকাযুক্ত লাল পতাকা এবং সাদা রিটার্ন ক্যাপসুলের পটভূমিতে নীল রঙের পৃথিবী দেখা যাচ্ছে।
বর্তমানে তিয়ানওয়েন-২ পৃথিবী থেকে প্রায় ৪৩ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে এবং নিকট-পৃথিবীর গ্রহাণু ২০১৬HO৩ (কামো'ওলেওয়া নামেও পরিচিত) থেকে ৪৫ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। ২৯ মে, ২০২৫ তারিখে শুরু হওয়া এই অভিযানটি গ্রহাণু ২০১৬HO৩ থেকে নমুনা সংগ্রহ এবং মূল-বেল্টের ধূমকেতু ৩১১পি (311P) নিয়ে গবেষণা করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। মহাকাশযানটি ক্যামেরা, স্পেকট্রোমিটার এবং রাডার সহ ১১টি অত্যাধুনিক যন্ত্রে সজ্জিত। মহাকাশযানটি সফলভাবে কক্ষপথে পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে, যার মধ্যে নমুনা সংগ্রহের যন্ত্র স্থাপন এবং ইলেকট্রনিক সিস্টেম পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত। সমস্ত সিস্টেম স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে এবং মহাকাশ পরিবেশের উপর বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে।
তিয়ানওয়েন-২ চীনের প্রথম গ্রহাণু নমুনা-ফেরত মিশন, যা দেশটির মহাকাশ অনুসন্ধানের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই মিশনের মেয়াদ প্রায় এক দশক পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে, এবং গ্রহাণুর নমুনা ২০২৭ সালের শেষের দিকে পৃথিবীতে ফিরে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই সাফল্য চীনের মহাকাশ অনুসন্ধানে ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা এবং সৌরজগৎ সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান বৃদ্ধিতে তাদের অঙ্গীকারকে তুলে ধরে। এই মিশনের মাধ্যমে চীন জাপান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোর সঙ্গে গ্রহাণু থেকে নমুনা ফিরিয়ে আনার সক্ষমতা অর্জনকারী দেশগুলোর তালিকায় যুক্ত হবে।
এই মিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ে, তিয়ানওয়েন-২ মহাকাশযানটি মূল-বেল্টের ধূমকেতু ৩১১পি-এর দিকে যাত্রা করবে। সেখানে এটি একটি রিমোট-সেন্সিং সমীক্ষা পরিচালনা করবে। ৩১১পি (311P) গ্রহাণু এবং ধূমকেতুর বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে, যা সৌরজগতের উৎপত্তি এবং বিবর্তন সম্পর্কে অমূল্য তথ্য সরবরাহ করতে পারে।
এই মহাকাশযানটি গ্রহাণু ২০১৬HO৩ (যা কামো'ওলেওয়া নামেও পরিচিত) থেকে নমুনা সংগ্রহ করবে, যা পৃথিবীর একটি 'কোয়াসি-স্যাটেলাইট' বা প্রায়-উপগ্রহ হিসেবে পরিচিত। এই গ্রহাণুটি প্রায় ৪০-১০০ মিটার চওড়া এবং এটি পৃথিবীর সঙ্গে সূর্যের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে। এটি পৃথিবীর একটি স্থিতিশীল প্রায়-উপগ্রহের সেরা উদাহরণ। এই মিশনটি সৌরজগতের উৎপত্তি এবং বিবর্তন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে প্রসারিত করবে।