ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ESA) এবং NASA যৌথভাবে ইন্টারস্টেলার ধূমকেতু 3I/ATLAS-এর উপর গভীর গবেষণা চালাচ্ছে। এই মহাজাগতিক বস্তুটি আমাদের সৌরজগতে তৃতীয় নিশ্চিত ইন্টারস্টেলার বস্তু হিসেবে আবিষ্কৃত হয়েছে, যা মহাবিশ্বের উৎস সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে প্রসারিত করার এক অভূতপূর্ব সুযোগ করে দিচ্ছে।
আবিষ্কার ও গতিপথ: 3I/ATLAS ধূমকেতুটি প্রথম নজরে আসে ১ জুলাই, ২০২৫ তারিখে চিলির রিও হার্টাডোতে অবস্থিত ATLAS টেলিস্কোপের মাধ্যমে। এটি বর্তমানে প্রায় ৬০ কিমি/সেকেন্ড গতিতে সূর্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ২০২৫ সালের ৩০ অক্টোবর নাগাদ এটি সূর্যের সবচেয়ে কাছে আসবে, যা মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথের ভেতর দিয়ে অতিক্রম করবে। প্রায় ২০ কিলোমিটার প্রশস্ত এই ধূমকেতুটি পৃথিবীর জন্য কোনো হুমকি সৃষ্টি করছে না এবং এটি আমাদের গ্রহ থেকে প্রায় ২৪০ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে থাকবে।
পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ: ESA-এর প্ল্যানেটারি ডিফেন্স অফিস হাওয়াই, চিলি এবং অস্ট্রেলিয়ার টেলিস্কোপ ব্যবহার করে 3I/ATLAS-কে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। NASA-এর হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ২১ জুলাই, ২০২৫ তারিখে ধূমকেতুটির বরফ-শীতল কেন্দ্রকে ঘিরে থাকা ধূলিকণার এক ফোঁটা-আকৃতির কোমা (coma) ধারণ করে। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপও ৬ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে ধূমকেতুটির গঠন ও কার্যকলাপ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছে।
রাসায়নিক গঠন ও বৈশিষ্ট্য: সাম্প্রতিক গবেষণাগুলোতে 3I/ATLAS-এর মধ্যে জলের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। নিল গেরেলস-সুইফট অবজারভেটরি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ধূমকেতুটির পৃষ্ঠে প্রায় ১৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকা সক্রিয়ভাবে জলীয় বাষ্প নিঃসরণ করছে। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের ইনফ্রারেড স্পেকট্রোস্কোপি থেকে জানা গেছে যে, এর কোমা মূলত কার্বন ডাই অক্সাইড (CO₂) দ্বারা গঠিত, যেখানে কার্বন ডাই অক্সাইড ও জলের অনুপাত প্রায় ৮:১, যা মহাজাগতিক বস্তুর মধ্যে সর্বোচ্চ। এই অস্বাভাবিক রাসায়নিক গঠন ধূমকেতুটির মহাজাগতিক উৎস সম্পর্কে নতুন ধারণা দিচ্ছে। এটি প্রায় ৭ বিলিয়ন বছর পুরানো হতে পারে, যা আমাদের সৌরজগতের চেয়েও প্রাচীন।
মহাজাগতিক গুরুত্ব: 3I/ATLAS-এর মতো ইন্টারস্টেলার বস্তুগুলো সৌরজগতের বাইরের পরিবেশ এবং গ্রহ গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে অমূল্য তথ্য সরবরাহ করে। এই ধূমকেতুটির উপর চলমান গবেষণা মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও বিবর্তন সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধিকে আরও গভীর করবে।