১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে, চীন তাদের চন্দ্রাভিযান কর্মসূচির জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করেছে। এই দিনে, লং মার্চ ১০ রকেটের প্রথম পর্যায়ের একটি সফল হট ফায়ার পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে, যা এই দশকের শেষ নাগাদ চাঁদে নভোচারী পাঠানোর চীনের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। পরীক্ষাটি চীনের হাইনান প্রদেশের ওয়েনচাং মহাকাশযান উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। এই পরীক্ষায়, সাতটি YF-100K ইঞ্জিন, যা কেরোসিন-তরল অক্সিজেন ব্যবহার করে, একটানা ৩২০ সেকেন্ড ধরে প্রজ্বলিত হয়েছিল। পরীক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল নিম্ন-থ্রাস্ট অবস্থায় ক্লাস্টার্ড ইঞ্জিনগুলির কর্মক্ষমতা এবং পুনরায় চালু হওয়ার ক্ষমতা মূল্যায়ন করা।
চায়না অ্যারোস্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কর্পোরেশন (CASC) এবং চায়না ম্যানড স্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং অফিস (CMSEO) উভয়ই পরীক্ষার সাফল্য নিশ্চিত করেছে এবং জানিয়েছে যে সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে। YF-100K ইঞ্জিনগুলি তাদের উন্নত পাম্প-ব্যাক সুইং প্রযুক্তির জন্য পরিচিত, যা ইঞ্জিন কাঠামোর আকার এবং ওজন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে, পাশাপাশি ১৩০ টন পর্যন্ত থ্রাস্ট তৈরি করতে সক্ষম। এই পরীক্ষাটি চীনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পূর্ণ-সিস্টেম পরীক্ষা ছিল, যেখানে প্রায় ১,০০০ টন সম্মিলিত থ্রাস্ট উৎপন্ন হয়েছিল।
লং মার্চ ১০ রকেটটি একটি তিন-কোর, তিন-পর্যায়ের রকেট, যার উচ্চতা ৯২.৫ মিটার। এটি বিশেষভাবে চীনের নভোচারী চন্দ্রাভিযান মিশনের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এই মিশনের কৌশল অনুযায়ী, দুটি লং মার্চ ১০ রকেট পৃথকভাবে উৎক্ষেপণ করা হবে। একটি বহন করবে নভোচারী মহাকাশযান মেংঝু (Mengzhou), এবং অন্যটি বহন করবে চন্দ্র অবতরণ যান লানইউয়ে (Lanyue)। চন্দ্র কক্ষপথে, মেংঝু মহাকাশযানটি লানইউয়ে চন্দ্র অবতরণ যানের সাথে মিলিত হবে এবং ডক করবে। এরপর দুজন নভোচারী লানইউয়ে অবতরণ যানে করে চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করবেন এবং সেখানে অল্প সময়ের জন্য অবস্থান করবেন। ২০৩০ সালের পূর্বে এই নভোচারী চন্দ্র অবতরণ সম্পন্ন করাই চীনের মূল লক্ষ্য, এবং এর পাশাপাশি তারা আন্তর্জাতিক চন্দ্র গবেষণা স্টেশন (ILRS) স্থাপনেরও আকাঙ্ক্ষা রাখে।
এই সাম্প্রতিক পরীক্ষাটি চীনের চন্দ্রাভিযান কর্মসূচির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মূল্যায়নের পরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৬ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে, নভোচারী লানইউয়ে চন্দ্র অবতরণ যানটি হেবেই প্রদেশে একটি সিমুলেশন সাইটে অবতরণ এবং উড্ডয়ন পরীক্ষা সম্পন্ন করেছিল। এই অগ্রগতিগুলি চীনের মহাকাশ অনুসন্ধান ক্ষমতা সম্প্রসারণ এবং চাঁদে একটি স্থায়ী মানব উপস্থিতি প্রতিষ্ঠার প্রতি তাদের অঙ্গীকারকে তুলে ধরে। চীনের চন্দ্রাভিযানের অগ্রগতি আন্তর্জাতিকভাবে মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর্টেমিস কর্মসূচির সাথে এর তুলনা করা হচ্ছে। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে চীনের পদ্ধতিগত অগ্রগতি এবং স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ তাদের আর্টেমিস কর্মসূচির তুলনায় একটি সুবিধা দিতে পারে, যা কিছু প্রযুক্তিগত এবং সময়সীমার চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। এই সফল হট ফায়ার পরীক্ষাটি লং মার্চ ১০ রকেটের প্রথম পর্যায়ের কার্যকারিতা প্রমাণ করে এবং চাঁদে নভোচারী পাঠানোর লক্ষ্যের দিকে চীনকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। এই পরীক্ষাটি চীনের মহাকাশ কর্মসূচির ধারাবাহিক উন্নয়ন এবং মহাকাশে তাদের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।