ইএসএ-র 'রামসেস' মিশনে জাপানের H3 রকেট: অ্যাপোফিস গ্রহাণু পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা

সম্পাদনা করেছেন: Tetiana Martynovska 17

ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি (ESA)-র 'রামসেস' মিশনে জাপানের মহাকাশ সংস্থা JAXA-র অংশগ্রহণ মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই মিশনের মূল লক্ষ্য হলো ২০২৯ সালে পৃথিবীর অত্যন্ত কাছ দিয়ে অতিক্রমকারী অ্যাপোফিস গ্রহাণুকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা। JAXA এই ঐতিহাসিক মিশনে তাদের H3 রকেট সরবরাহের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চলেছে। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে, JAXA জাপানের কাছে এই মিশনের জন্য তহবিল বরাদ্দের একটি আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জমা দিয়েছে, যা এই আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্বকেই তুলে ধরে।

'রামসেস' মিশনের প্রধান উদ্দেশ্য হলো ২০২৯ সালের ১৩ই এপ্রিল পৃথিবীর কাছাকাছি আসা অ্যাপোফিস গ্রহাণুটি পর্যন্ত পৌঁছানো। এই মহাজাগতিক বস্তুটি তখন পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৩২,০০০ কিলোমিটার দূর দিয়ে অতিক্রম করবে। এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত বিরল; অ্যাপোফিসের মতো আকারের বস্তু এত কাছ দিয়ে পৃথিবীতে আসে প্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার বছরে একবার। এই মহাজাগতিক সাক্ষাৎকারের সময়, পৃথিবীর শক্তিশালী মহাকর্ষীয় টান গ্রহাণুটির কক্ষপথ এবং গঠনে পরিবর্তন আনতে পারে, যা এর গঠন এবং অভ্যন্তরীণ কাঠামো অধ্যয়নের এক অভূতপূর্ব সুযোগ করে দেবে।

'রামসেস' মহাকাশযানটি এই কাছ থেকে অতিক্রম করার আগে ও পরে পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণের জন্য অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতিতে সজ্জিত থাকবে। এই মিশনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হিসেবে, সর্বোচ্চ বৈজ্ঞানিক ফলাফল অর্জনের লক্ষ্যে গ্রহাণুটির উপর দুটি কিউবস্যাট স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রথম কিউবস্যাটটি হবে একটি হাইব্রিড মডেল, যা একটি প্ল্যাটফর্ম এবং একটি বিশ্লেষক যন্ত্রের সমন্বয়ে গঠিত হবে। এতে অ্যাপোফিসের অভ্যন্তরীণ কাঠামো অধ্যয়নের জন্য একটি নিম্ন-কম্পাঙ্কের রাডারও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। দ্বিতীয় কিউবস্যাটটি স্প্যানিশ কোম্পানি Emxys দ্বারা তৈরি করা হচ্ছে এবং এটি একটি প্রোব হিসেবে কাজ করবে, যা গ্রহাণুটির পৃষ্ঠে অবতরণে সক্ষম হবে।

'রামসেস' মিশনের সম্পূর্ণ তহবিল বরাদ্দের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে ESA মন্ত্রীদের একটি বৈঠকে নেওয়া হবে। মিশনটি ২০২৮ সালে উৎক্ষেপণের জন্য নির্ধারিত হয়েছে, যাতে এটি ২০২৯ সালে পৃথিবীর কাছাকাছি আসার আগেই অ্যাপোফিসের কাছে পৌঁছাতে পারে। এই মিশনের মাধ্যমে ESA এবং JAXA-র মধ্যেকার সহযোগিতা মহাকাশ অনুসন্ধান এবং গ্রহীয় প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের প্রতীক। এর মূল উদ্দেশ্য হলো মহাকাশ থেকে আসা সম্ভাব্য হুমকি থেকে আমাদের গ্রহকে সুরক্ষিত রাখা।

এই আন্তর্জাতিক উদ্যোগটি কেবল বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অর্জনের একটি প্রয়াসই নয়, বরং এটি মহাকাশ অনুসন্ধানে বিভিন্ন দেশের সম্মিলিত শক্তি এবং প্রতিশ্রুতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই ধরনের সহযোগিতা আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে গভীরতর উপলব্ধি অর্জনে এবং মানবজাতির ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ESA এবং JAXA-র এই যৌথ প্রচেষ্টা মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে, যা আগামী প্রজন্মের বিজ্ঞানীদের অনুপ্রাণিত করবে।

উৎসসমূহ

  • Universe Space Tech

  • Reuters

  • ESA

  • ESA

  • ESA

  • BBC Sky at Night Magazine

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।

ইএসএ-র 'রামসেস' মিশনে জাপানের H3 রকেট: অ্য... | Gaya One