আয়ারল্যান্ডের মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে, দেশটির প্রথম স্যাটেলাইট EIRSAT-1 সফলভাবে তার মিশন সম্পন্ন করেছে এবং পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনরায় প্রবেশ করে নিরাপদে ডিকমিশন (deorbit) হয়েছে। এই মাইলফলক অর্জনটি আইরিশ মহাকাশ খাতের জন্য এক বিরাট সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ইউনিভার্সিটি কলেজ ডাবলিন (UCD)-এর ছাত্র ও কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির (ESA) 'ফ্লাই ইয়োর স্যাটেলাইট!' (Fly Your Satellite!) প্রোগ্রামের অধীনে তৈরি এই স্যাটেলাইটটি ২০২৩ সালের ১লা ডিসেম্বর ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যান্ডেনবার্গ স্পেস ফোর্স বেস থেকে একটি স্পেসএক্স ফ্যালকন ৯ রকেটের মাধ্যমে মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল। তার কর্মজীবনে EIRSAT-1 তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা পরিচালনা করেছে। এর মধ্যে গামা-রে বার্স্ট (Gamma-Ray Bursts) পর্যবেক্ষণের জন্য গামা-রে মডিউল (GMOD), স্যাটেলাইটের তাপীয় পৃষ্ঠের আবরণ (thermal surface treatments) মূল্যায়নের জন্য এনবিও মডিউল (EMOD) এবং স্যাটেলাইটের অবস্থান নিয়ন্ত্রণের জন্য ওয়েভ-বেসড কন্ট্রোল (WBC) সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত ছিল। উল্লেখযোগ্যভাবে, GMOD মহাজাগতিক গামা-রে বিস্ফোরণ এবং দুটি সৌর শিখা সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে, যা জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। EMOD মহাকাশে থাকা অবস্থায় তাপীয় আবরণের কার্যকারিতা সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করেছে এবং WBC স্যাটেলাইটের ওরিয়েন্টেশন নিয়ন্ত্রণের একটি নতুন পদ্ধতি প্রদর্শন করেছে।
EIRSAT-1 এর ডিকমিশন প্রক্রিয়াটি মহাকাশে টেকসই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ESA-এর প্রতিশ্রুতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। ২০২৫ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর স্যাটেলাইটটি তার শেষ সংকেত প্রেরণ করে এবং পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনরায় প্রবেশ করে জ্বলে ওঠে। UCD-এর সেন্টার ফর স্পেস রিসার্চের অধ্যাপক লোরেন হ্যানলন দলের অর্জন নিয়ে গর্ব প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, "যদিও এটি দলের জন্য একটি দুঃখের দিন, আমরা গর্বিত যে EIRSAT-1 তার মিশনের শেষ পর্যন্ত সমস্ত লক্ষ্য অর্জন করেছে।"
এই সফল মিশনটি মহাকাশ গবেষণায় আয়ারল্যান্ডের ক্রমবর্ধমান সক্ষমতাকে তুলে ধরে এবং ভবিষ্যৎ বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৫০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী, বিশেষ করে পদার্থবিদ্যা, প্রকৌশল, কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং গণিতের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীরা মহাকাশ ব্যবস্থার End-to-End দক্ষতা অর্জন করেছে, যা পূর্বে আইরিশ শিল্পে দেখা যায়নি। এই মিশনের সাফল্যের ফলে UCD-এর ন্যাশনাল স্পেস সাবসিস্টেমস অ্যান্ড পেলোডস ইনিশিয়েটিভ (NSSPI)-এর মতো আরও প্রকল্প ও কর্মসূচির উন্নয়ন ও অর্থায়ন সরাসরি সমর্থিত হয়েছে, যা প্রায় ৭.৯ মিলিয়ন ইউরো তহবিল পেয়েছে।