ভারতের মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে গগনযান মিশনের মাধ্যমে। এই মিশনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় প্যারাসুট সিস্টেমের এক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO)। গত ২৪ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র, শ্রীহরিকোটা থেকে ইন্টিগ্রেটেড এয়ার ড্রপ টেস্ট (IADT-01) নামে এই পরীক্ষাটি পরিচালিত হয়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে গগনযান ক্রু মডিউলের প্যারাসুট সিস্টেমের কার্যকারিতা যাচাই করা হয়েছে, যা নভোচারীদের নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
পরীক্ষা চলাকালীন, ভারতীয় বায়ুসেনার চিনুক হেলিকপ্টারের সাহায্যে গগনযান ক্রু মডিউলের একটি পূর্ণাঙ্গ মক-আপকে প্রায় ৩ কিলোমিটার উচ্চতায় তোলা হয়। এরপর নির্দিষ্ট সময়ে প্যারাসুটগুলি খুলে যায় এবং মডিউলটি নিরাপদে সমুদ্রে অবতরণ করে। ভারতীয় নৌসেনা সফলভাবে মডিউলটি উদ্ধার করে। এই পরীক্ষাটি একটি লঞ্চ প্যাড অ্যাবর্ট পরিস্থিতিও অনুকরণ করে, যা জরুরি অবস্থায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করে।
গগনযান ভারতের প্রথম মনুষ্যবাহী মহাকাশ অভিযান, যা বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ২০২৭ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে এই মিশনের প্রথম মনুষ্যবাহী উৎক্ষেপণ হওয়ার কথা। এই মিশনের লক্ষ্য হল ভারতীয় নভোচারীদের পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে পাঠানো, যা ভারতের মহাকাশ অনুসন্ধানের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হবে।
এই মিশনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে, ISRO ইতিমধ্যেই একাধিক পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ সম্পন্ন করেছে, যার মধ্যে টেস্ট ভেহিকেল অ্যাবর্ট মিশন (TVAM) এবং এই বছরের শুরুতে প্রথম টেস্ট ভেহিকেল মিশন অন্তর্ভুক্ত। আগামীতে ২০২৫ সালের শেষের দিকে দ্বিতীয় টেস্ট ভেহিকেল মিশন (TV-D2) এবং ২০২৬ সালে দুটি মনুষ্যবিহীন অরবিটাল ফ্লাইট অনুষ্ঠিত হবে। কোভিড-১৯ অতিমারী এবং নতুন প্রযুক্তি উন্নয়নের জটিলতার কারণে গগনযান মিশনের সময়সূচীতে কিছু বিলম্ব হয়েছে, যার ফলে উৎক্ষেপণ ২০২৭ সাল পর্যন্ত পিছিয়ে গেছে। এতদসত্ত্বেও, ভারতের মহাকাশ উচ্চাকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে এই মিশনটি রয়েছে। ভবিষ্যতে একটি জাতীয় মহাকাশ স্টেশন স্থাপন এবং আরও মনুষ্যবাহী ও মনুষ্যবিহীন অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনাও রয়েছে।
এই প্যারাসুট সিস্টেমের সফল পরীক্ষা গগনযান মিশনের নিরাপত্তা ও সাফল্যের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই পরীক্ষাটি নিশ্চিত করে যে, নভোচারীদের নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো প্রস্তুত। ভারতীয় বায়ুসেনার চিনুক হেলিকপ্টার, যা প্রায় ১০ টন পর্যন্ত ভার বহন করতে সক্ষম এবং দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলেও কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে, এই ধরনের মহাকাশ অভিযানের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। ভারতীয় নৌসেনার উদ্ধার অভিযানও এই মিশনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা নভোচারীদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করে।