চীন চাঁদের বুকে নির্মাণ কাজের জন্য এক যুগান্তকারী সৌর-চালিত ইট প্রস্তুতকারক যন্ত্র তৈরি করেছে। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি চাঁদের মাটি ব্যবহার করে ইট তৈরি করতে সক্ষম, যা ভবিষ্যতে চাঁদে ঘাঁটি নির্মাণ এবং পরিকাঠামো তৈরিতে বিপ্লব ঘটাতে পারে। এই উদ্ভাবনটি পৃথিবী থেকে ভারী নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করবে এবং নির্মাণ ব্যয়ও কমিয়ে আনবে।
এই যন্ত্রটি চাঁদের পৃষ্ঠের মাটি (রেগোলিথ) ব্যবহার করে। এটি সূর্যের আলোকে কেন্দ্রীভূত করে এবং প্রায় ১৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রেগোলিথ গলিয়ে ঘন ও টেকসই ইট তৈরি করে। এই ইটগুলি চাঁদের পরিবেশের জন্য অত্যন্ত উপযোগী, কারণ এগুলো চাপযুক্ত মডিউলগুলিকে বিকিরণ এবং উল্কাপিণ্ড থেকে সুরক্ষা প্রদান করতে পারে। এই প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর স্বয়ংসম্পূর্ণতা; এটি কোনো অতিরিক্ত উপাদানের উপর নির্ভর করে না, শুধুমাত্র চাঁদের মাটি ব্যবহার করেই ইট তৈরি করতে পারে।
এই যুগান্তকারী উদ্ভাবনটি চীনের মহাকাশ গবেষণার উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক চন্দ্র গবেষণা কেন্দ্র (International Lunar Research Station) স্থাপনের ক্ষেত্রে। এই প্রযুক্তি চাঁদে দীর্ঘমেয়াদী বসতি স্থাপনের পথ প্রশস্ত করবে। চাঁদের মাটি ব্যবহার করে ইট তৈরির এই প্রক্রিয়াটি মহাকাশ গবেষণায় ইন-সিটু রিসোর্স ইউটিলাইজেশন (ISRU) বা স্থানীয় সম্পদ ব্যবহারের ধারণাকে আরও শক্তিশালী করে। এটি পৃথিবী থেকে নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের বিপুল খরচ এবং জটিলতা এড়াতে সাহায্য করবে।
চাঁদের পরিবেশ পৃথিবীর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং নির্মাণ কাজের জন্য অত্যন্ত প্রতিকূল। বায়ুমণ্ডলের অনুপস্থিতির কারণে, চাঁদের কাঠামোকে চরম তাপমাত্রা পরিবর্তন, উল্কাপিণ্ডের আঘাত এবং সৌর বিকিরণ সহ্য করতে হয়। চাঁদের ধুলো (রেগোলিথ) অত্যন্ত ক্ষয়কারী এবং যন্ত্রপাতি ও মহাকাশচারীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই, চাঁদে নির্মিত কাঠামোকে অবশ্যই টেকসই এবং প্রতিরক্ষামূলক হতে হবে। চীনের এই সৌর-চালিত ইট প্রস্তুতকারক যন্ত্রটি এই চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই প্রযুক্তিটি কেবল ইট তৈরি করতেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি মহাকাশে নির্মাণ কাজের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য উপাদান তৈরিতেও সহায়ক হতে পারে। চীনের মহাকাশ কর্মসূচির অংশ হিসেবে, এই ধরনের প্রযুক্তি চাঁদে একটি স্থায়ী ঘাঁটি স্থাপনের লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই উদ্ভাবনটি মহাকাশ অনুসন্ধানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং মানবজাতিকে মহাকাশে আরও দূরে যাওয়ার সুযোগ করে দেবে।