নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়-এর গবেষকরা মহাকাশযান চালনার জন্য এক নতুন ধরনের জ্বালানি-বিহীন, অতি-হালকা প্রোপালশন সিস্টেম তৈরি করেছেন। এই ট্রান্সমিটিভ সোলার সেইল (transmissive solar sails) প্রচলিত প্রতিফলিত করার বদলে, আলোর ক্ষুদ্র প্রতিসরণ প্যাটার্নের মাধ্যমে সূর্যালোককে বাঁকিয়ে কাজ করে। এই উদ্ভাবনী পদ্ধতি ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযানের জন্য উন্নত নিয়ন্ত্রণ এবং প্রোপালশন দক্ষতা প্রদান করে।
সম্প্রতি অ্যাক্টা অ্যাস্ট্রোনটিকা (Acta Astronautica) জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে, এই ধরনের সোলার সেইল প্যাটার্ন ডিজাইনের জন্য একটি নতুন অপ্টিমাইজেশন ফ্রেমওয়ার্কের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। এই অগ্রগতি টেকসই, কম-প্রভাবযুক্ত মহাকাশ প্রযুক্তির বিকাশে সহায়তা করে, যা মহাকাশে দীর্ঘস্থায়ী অপারেশনের সম্ভাবনা বাড়ায় এবং অনবোর্ড জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমায়। এই গবেষণা মহাকাশ-ভিত্তিক জলবায়ু হস্তক্ষেপের মতো আরও উচ্চাভিলাষী অ্যাপ্লিকেশনগুলিতেও সহায়তা করে।
মিউনিখ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি (Technical University of Munich) এবং কেটিএইচ রয়্যাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (KTH Royal Institute of Technology)-এর সাথে সহযোগিতায়, একটি গ্রহীয় সানশেড (planetary sunshade) সিস্টেমের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে, যার লক্ষ্য হল সৌর বিকিরণ প্রতিফলিত বা বিক্ষিপ্ত করে পৃথিবীর তাপমাত্রা হ্রাস করা। ডঃ ক্যাপ্পেলেত্তি (Dr. Cappelletti) নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জলবায়ু উদ্ভাবনের উপর একটি জাতিসংঘ অনুষ্ঠানে সোলার সেইল-চালিত গ্রহীয় সানশেডগুলির ধারণা উপস্থাপন করেছেন, যা ভবিষ্যতের জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা কৌশলগুলির জন্য এই প্রযুক্তিগুলির সম্ভাবনা তুলে ধরে।
নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে তাদের কিউবস্যাট (CubeSat) মিশন, ওয়ার্মসেইল (WormSail) এবং জ্যামসেইল (JamSail)-এ এই ট্রান্সমিটিভ সেইলগুলিকে একীভূত করছে। এই ছাত্র-নেতৃত্বাধীন মিশনগুলি, যা বর্তমানে উন্নয়নাধীন, নিম্ন পৃথিবীর কক্ষপথে কম খরচে সোলার সেইল প্রোপালশন এবং নতুন অ্যাটিটিউড কন্ট্রোল (attitude control) প্রদর্শনের লক্ষ্য রাখে।
এই গবেষণা নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকসই প্রোপালশন-এর প্রতি বৃহত্তর অঙ্গীকারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়টি সম্প্রতি ক্রায়োজেনিক হাইড্রোজেন-ইলেকট্রিক প্রোপালশন সিস্টেমের জন্য £৫.৩ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি প্রোগ্রাম চালু করেছে এবং ২০২৬ সালের মাঝামাঝি নাগাদ চালু হওয়ার প্রত্যাশিত একটি হাইড্রোজেন প্রোপালশন গবেষণা ল্যাবরেটরির জন্য পরিকল্পনা অনুমোদন পেয়েছে। এই গবেষণাটি মহাকাশ প্রযুক্তির পাশাপাশি পৃথিবীর জলবায়ু সংকট মোকাবেলায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।