২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে, ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে তাদের নজরদারি ক্ষমতা আরও জোরদার করার লক্ষ্যে অফেক ১৯ নামক একটি অত্যাধুনিক গুপ্তচর স্যাটেলাইট সফলভাবে উৎক্ষেপণ করেছে। স্থানীয় সময় রাত ১০:৩০ মিনিটে, একটি শ্যাভিট তিন-পর্যায়ের রকেটের মাধ্যমে ইসরায়েলের একটি অজ্ঞাত স্থান থেকে এই উৎক্ষেপণ সম্পন্ন হয়। এই নতুন মহাকাশযানটি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা সক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অফেক ১৯ একটি অত্যন্ত উন্নত সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার (SAR) পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইট। এটি পৃথিবীর পৃষ্ঠের বিশদ, উচ্চ-রেজোলিউশনের চিত্র সরবরাহ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে এবং প্রায় ৫০০ কিলোমিটার উচ্চতায় কক্ষপথে স্থাপন করা হয়েছে। SAR প্রযুক্তি ব্যবহার করে, এই স্যাটেলাইট মেঘ, কুয়াশা এবং রাতের অন্ধকারের মতো প্রতিকূল পরিবেশেও ২৪ ঘন্টা নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারি করতে সক্ষম। এর মাধ্যমে দিনের আলো বা আবহাওয়ার উপর নির্ভর না করেই উচ্চ-মানের চিত্র সংগ্রহ করা সম্ভব, যা গোয়েন্দা তথ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই উৎক্ষেপণটি ইসরায়েলের মহাকাশ কর্মসূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ১৯৮৮ সালে প্রথম অফেক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর থেকে, ইসরায়েল নিজেদের মহাকাশ-ভিত্তিক পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ধারাবাহিকভাবে উন্নত করে চলেছে। শ্যাভিট রকেট, যা মূলত জেরিকোর মতো ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি, ইসরায়েলকে নিজস্ব উৎক্ষেপণ ক্ষমতা সম্পন্ন কয়েকটি দেশের মধ্যে অন্যতম করে তুলেছে। অফেক ১৯ পূর্ববর্তী অফেক ১৩ (যা মার্চ ২০২৩ সালে উৎক্ষেপিত হয়েছিল) এবং অফেক ১৬ (জুলাই ২০২০ সালে উৎক্ষেপিত) স্যাটেলাইটগুলির একটি উন্নত সংস্করণ, যা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এই স্যাটেলাইটের কৌশলগত গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন যে অফেক ১৯ শত্রুদের জন্য একটি বার্তা, যা নির্দেশ করে যে ইসরায়েল সর্বদা তাদের উপর নজর রাখছে। এই স্যাটেলাইটের ক্ষমতা মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ইসরায়েলের চলমান আঞ্চলিক কার্যক্রমের জন্য অত্যন্ত জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, চলতি বছরের একটি ১২ দিনের সংঘাতে ইরানীয় ভূখণ্ডের উপর ১২,০০০ এরও বেশি ছবি সংগ্রহ করে নির্ভুল লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য এই ধরনের স্যাটেলাইট চিত্র ব্যবহার করা হয়েছিল। অফেক ১৯ মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো বিন্দুতে নিরবচ্ছিন্ন, যুগপৎ নজরদারি বজায় রাখার জন্য ইসরায়েলের বৃহত্তর কৌশলের একটি অংশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মহাকাশ আজ যুদ্ধের একটি ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। অফেক ১৯-এর মতো উন্নত SAR স্যাটেলাইটগুলি ইসরায়েলের মহাকাশ-ভিত্তিক শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে এবং কয়েক দশক ধরে তাদের কৌশলগত সুবিধা বাড়াতে সহায়ক হবে। এই প্রযুক্তি শুধু সামরিক নজরদারিতেই নয়, বরং দুর্যোগ মোকাবিলা এবং পরিবেশ পর্যবেক্ষণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইসরায়েল এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তাদের প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করেছে, যা বর্তমান আঞ্চলিক পরিস্থিতিতে তাদের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করবে। অফেক ১৯ শীঘ্রই সম্পূর্ণরূপে চালু হবে এবং ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কার্যক্রমকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।