জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি (JAXA) ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে আকাসুকি মিশনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করেছে। এই দিনটি শুক্র গ্রহের কক্ষপথে মানবজাতির শেষ সক্রিয় মহাকাশযানের যাত্রার অবসান চিহ্নিত করেছে। ২০১০ সালের ২১ মে উৎক্ষেপিত আকাসুকি মিশনের মূল উদ্দেশ্য ছিল শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডল এবং আবহাওয়ার ধরণগুলি অধ্যয়ন করা।
উৎক্ষেপণের পর প্রথম কক্ষপথে প্রবেশের চেষ্টায়, ২০১০ সালের ডিসেম্বরে একটি ইঞ্জিন ত্রুটির কারণে মিশনটি একটি প্রাথমিক বাধার সম্মুখীন হয়েছিল। তবে, JAXA প্রকৌশলীরা গৌণ থ্রাস্টার ব্যবহার করে মহাকাশযানটির গতিপথ সামঞ্জস্য করতে সক্ষম হন এবং ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এটি শুক্র গ্রহের কক্ষপথে প্রবেশ করে। এটি পৃথিবীর বাইরে জাপানের প্রথম গ্রহীয় অরবিটার ছিল। আকাসুকি তার কার্যকালের সময়কালে শুক্র গ্রহের ঘন বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করেছে। এটি সৌরজগতে রেকর্ড করা বৃহত্তম স্থির মাধ্যাকর্ষণ তরঙ্গ (gravity waves) আবিষ্কার করেছে এবং গ্রহটির অতি-দ্রুত ঘূর্ণায়মান বায়ুপ্রবাহ সম্পর্কে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেছে। মিশনটি বহির্জাগতিক জলবায়ু অধ্যয়নের জন্য ডেটা অ্যাসিমিলশন কৌশলগুলির ব্যবহারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।
২০২৪ সালের এপ্রিলে, একটি কম-নির্ভুলতা অ্যাটিটিউড কন্ট্রোল মোডে প্রবেশ করার পর JAXA আকাসুকির সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, যোগাযোগ পুনঃস্থাপন করা সম্ভব হয়নি, যার ফলে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে মিশনটির আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে। আকাসুকির অবসানের সাথে সাথে, বর্তমানে শুক্র গ্রহের কক্ষপথে কোনো সক্রিয় মহাকাশযান নেই। তবে, নাসা, ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ESA) এবং ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO) ভবিষ্যতে শুক্র গ্রহ অনুসন্ধানের জন্য নতুন মিশন তৈরি করছে।
JAXA আকাসুকির উন্নয়ন ও পরিচালনার জন্য প্রাপ্ত সমর্থনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে এবং মিশনের উল্লেখযোগ্য অবদানকে স্বীকার করেছে। এই মিশনের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডল এবং জলবায়ু সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করেছে, যা ভবিষ্যতের গ্রহীয় অনুসন্ধানের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করেছে। আকাসুকি, যার অর্থ জাপানি ভাষায় 'ভোর', শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডলীয় সঞ্চালন অধ্যয়ন করেছে। এটি অতিবেগুনী এবং ইনফ্রারেড তরঙ্গদৈর্ঘ্যে মেঘের ম্যাপিং, বজ্রপাত সনাক্তকরণ এবং বায়ুমণ্ডলের উল্লম্ব কাঠামো পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আবহাওয়ার ধরণগুলি অধ্যয়ন করেছে। এই মিশনটি সৌরজগতে বৃহত্তম স্থির মাধ্যাকর্ষণ তরঙ্গ আবিষ্কারের জন্য উল্লেখযোগ্য, যা শুক্র গ্রহের পর্বতগুলির উপর বায়ুমণ্ডলের বিশাল ঢেউকে নির্দেশ করে। এটি শুক্র গ্রহের 'সুপার-রোটেশন' বা অতি-দ্রুত বায়ুমণ্ডলীয় সঞ্চালনের প্রক্রিয়াটিও ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করেছে, যেখানে বায়ুমণ্ডল গ্রহের পৃষ্ঠের চেয়ে ৬০ গুণ দ্রুত ঘোরে। এই ঘটনাটি এখনও একটি রহস্য যা বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছেন। আকাসুকি ডেটা অ্যাসিমিলশন কৌশল ব্যবহার করে শুক্র গ্রহের জলবায়ু অধ্যয়নে নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যা পৃথিবীর আবহাওয়ার গবেষণায় প্রচলিত। এই মিশনটি শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডলীয় গতিবিদ্যা এবং মেঘের গঠন সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধিকে উন্নত করেছে। ভবিষ্যতের শুক্র গ্রহ মিশনগুলি আকাসুকির দ্বারা সংগৃহীত তথ্যের উপর ভিত্তি করে তাদের গবেষণা পরিচালনা করবে।