বহু বছর ধরে, হৃদরোগের ঝুঁকির সঙ্গে সম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবারের কারণে সম্পূর্ণ দুধ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণাগুলি এই ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে এবং সম্পূর্ণ দুধের ব্যবহার নিয়ে একটি নতুন আলোচনার সূত্রপাত করেছে। টাফ্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ইনস্টিটিউটের পরিচালক দারিয়াস মোজাফফারিয়ান-এর মতো কিছু বিশেষজ্ঞ উল্লেখ করেছেন যে, ১৯৮০-এর দশকে শুরু হওয়া দুগ্ধজাত চর্বির 'ভুল নিন্দা' পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। ঐতিহ্যগতভাবে, সম্পূর্ণ দুধে থাকা স্যাচুরেটেড ফ্যাটকে হৃদরোগের একটি প্রধান কারণ হিসেবে দেখা হতো। তবে, নতুন গবেষণাগুলি ইঙ্গিত দেয় যে সম্পূর্ণ দুধের প্রভাব এতটা সরল নয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা নিয়মিত সম্পূর্ণ দুধ পান করেন, তাদের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি কম থাকে। [১০, ১৮] উদাহরণস্বরূপ, ২০১৯ সালে ইউরোপিয়ান হার্ট জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, দুধ, পনির এবং দই সহ দুগ্ধজাত পণ্যের পরিমিত সেবন হৃদরোগের কম ঝুঁকির সাথে যুক্ত। এটি সম্ভবত দুধে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিডের ভিন্ন ধরনের গঠনের কারণে হতে পারে, যা অন্যান্য স্যাচুরেটেড ফ্যাটের মতো ক্ষতিকর নয়। [১৫]
কিছু গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, সম্পূর্ণ দুধের ব্যবহার স্থূলতা এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতেও সহায়ক হতে পারে। [১০, ১৫] এছাড়াও, ২০২০ সালের একটি মেটা-বিশ্লেষণ ইঙ্গিত দেয় যে, সম্পূর্ণ দুধ পানকারী শিশুদের অতিরিক্ত ওজনের ঝুঁকি স্কিম দুধ পানকারী শিশুদের তুলনায় কম। বিশেষজ্ঞরা এখন মনে করছেন যে, শুধুমাত্র দুধের ফ্যাট কন্টেন্টের উপর মনোযোগ না দিয়ে, ক্যালোরির উৎস হিসেবে কী ব্যবহার করা হচ্ছে, তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তারা আরও বলছেন যে, দই এবং অন্যান্য গাঁজনযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার (fermented dairy products) স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। [১, ২, ৩] এই খাবারগুলিতে প্রোবায়োটিক থাকে, যা হজমশক্তি উন্নত করে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। [২, ৪]
এছাড়া, উদ্ভিদ-ভিত্তিক প্রোটিনের উৎস যেমন - শিম, ডাল, বাদাম এবং বীজ জাতীয় খাবারও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। [১৩, ১৬, ১৭, ২০] শেষ পর্যন্ত, সামগ্রিক খাদ্যাভ্যাসই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখলে, সম্পূর্ণ দুধের মতো খাবারগুলিও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর না হয়ে বরং উপকারী হতে পারে। [৫, ৬, ৯] পরিমিত পরিমাণে সম্পূর্ণ দুধ পান করলে তা কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের উপর ন্যূনতম প্রভাব ফেলতে পারে। [৭, ৮, ১৯] তাই, সম্পূর্ণ দুধ বর্জন করার পরিবর্তে, একটি সুষম খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসেবে এটি পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করার কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।