গবেষকরা লাল কাঠপিঁপড়া ব্যবহার করে ঐতিহ্যবাহী বলকান এবং তুর্কি দই তৈরির পদ্ধতি পুনরুজ্জীবিত করেছেন। এই পিঁপড়াদের শরীরের ব্যাকটেরিয়া, অ্যাসিড এবং এনজাইম দুধকে দই-এ রূপান্তরিত করতে সক্ষম। এই উদ্ভাবনী পদ্ধতিটি প্রাচীন সাংস্কৃতিক রীতিনীতি থেকে আধুনিক রন্ধনপ্রণালীতে অনুপ্রেরণা নেওয়ার এক চমৎকার উদাহরণ।
গবেষণায় দেখা গেছে যে ঐতিহ্যবাহী দইগুলিতে আধুনিক দইয়ের তুলনায় ব্যাকটেরিয়ার জীববৈচিত্র্য অনেক বেশি থাকে, যা আরও সমৃদ্ধ স্বাদ এবং গঠন তৈরি করে। দই তৈরির জন্য জীবন্ত পিঁপড়াদের ব্যবহার এই সঠিক অণুজীব সম্প্রদায় গড়ে তোলার জন্য অপরিহার্য ছিল। এই গবেষণা, যা মিশেলিন-স্টার রেস্তোরাঁর শেফদের সাথে সহযোগিতায় পরিচালিত হয়েছে, টেকসই প্রোটিনের উৎস হিসেবে পোকামাকড়ের সম্ভাবনা তুলে ধরেছে। যদিও এটি একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র, তবে পোকামাকড় থেকে প্রাপ্ত প্রোটিনের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য সম্ভাব্য ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবী সম্পর্কে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া, পরজীবী এবং অ্যালার্জেন সম্পর্কিত সম্ভাব্য ঝুঁকি বিদ্যমান। ইউরোপীয় ইউনিয়নে, খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত পোকামাকড়কে কঠোর নিরাপত্তা মান মেনে চলতে হয়, যার মধ্যে সম্ভাব্য বিপজ্জনক অণুজীব ধ্বংস করার জন্য পাস্তুরায়ন অন্তর্ভুক্ত। ক্রাস্টেসিয়ান অ্যালার্জিযুক্ত ব্যক্তিদের সতর্ক থাকতে হবে, কারণ ক্রস-প্রতিক্রিয়া সম্ভব।
ঐতিহ্যবাহী দই তৈরির এই পদ্ধতিটি কিন্তু পিঁপড়াদের ব্যবহার একটি বৃহত্তর জীববৈচিত্র্যের সুযোগ করে দেয়, যা দইকে আরও জটিল এবং অনন্য স্বাদ ও গঠন প্রদান করে। পিঁপড়ারা ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া, অ্যাসিটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া এবং তাদের নিজস্ব ফর্মিক অ্যাসিড সরবরাহ করে, যা দুধের প্রোটিন জমাট বাঁধতে এবং ঘন করতে সাহায্য করে। পিঁপড়াদের এনজাইমগুলিও দুধের প্রোটিন ভেঙে দইয়ের ঘনত্ব এবং গঠন উন্নত করে।
ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যা ৯.৭ বিলিয়নে পৌঁছাবে, যার জন্য খাদ্য উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করতে হবে। ঝিঁঝিঁ পোকা, ময়দার পোকা এবং ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই লার্ভার মতো পোকামাকড়কে ইতিমধ্যেই প্রোটিন, অ্যামিনো অ্যাসিড, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থের মূল্যবান উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। খাদ্য হিসেবে পোকামাকড়ের বাজার ২০২৩ সালে ৬০২.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমান করা হয়েছিল এবং আগামী দশকে এটি ৩.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই গবেষণাটি কেবল একটি প্রাচীন রন্ধনপ্রণালীকেই পুনরুজ্জীবিত করেনি, বরং খাদ্য উৎপাদনে প্রকৃতির অণুজীবের বৈচিত্র্যকে কাজে লাগানোর নতুন দিক উন্মোচন করেছে। এটি খাদ্য নিরাপত্তা এবং টেকসই প্রোটিনের উৎস হিসেবে পোকামাকড়ের সম্ভাবনার উপরও আলোকপাত করে। যেখানে প্রচলিত পশুসম্পদ ভিত্তিক প্রোটিন উৎপাদনের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, সেখানে পোকামাকড় একটি কার্যকর এবং পরিবেশবান্ধব বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। এটি কম জমি, জল এবং খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা সহ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণও কমিয়ে আনে। এই গবেষণা প্রমাণ করে যে, প্রকৃতির নিজস্ব পদ্ধতিগুলি প্রায়শই আমাদের খাদ্য ব্যবস্থার জন্য উদ্ভাবনী এবং টেকসই সমাধান সরবরাহ করতে পারে।