ফল ও সবজির সতেজতা বজায় রাখা এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য অপচয় হ্রাস করার ক্ষেত্রে কৃষি-প্রযুক্তি এক নতুন পথের সন্ধান দিয়েছে। ওয়েস্টফালিয়া ফ্রুট (Westfalia Fruit) সংস্থা অ্যাগ্রোসাসটেইন (AgroSustain) নামক কৃষি-প্রযুক্তি সংস্থার সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে 'আফন্ডো' (Afondo) নামে একটি বিশেষ ভোজ্য আবরণী বাণিজ্যিকীকরণের পথে এগিয়েছে। এই উদ্ভাবনটি পণ্যের গুণমান রক্ষার পাশাপাশি পরিবেশগত দায়িত্ব পালনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, যা বর্তমান সময়ের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
আফন্ডো আবরণীটি মূলত জৈব-উদ্ভিজ্জ তেল (bio-vegetable oils) দিয়ে তৈরি, যা ফলের জলীয় অংশ বা আর্দ্রতা হ্রাসকে প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম। এই প্রযুক্তি ফলের খুচরা বিক্রয়কালীন স্থায়িত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে, যার ফলে সরবরাহ শৃঙ্খলে অপচয় হ্রাস পায়। এই আবরণ ফলের পৃষ্ঠে একটি অদৃশ্য বাধা তৈরি করে, যা অক্সিজেন আদান-প্রদান সীমিত করার মাধ্যমে ছত্রাকজনিত রোগজীবাণুর বৃদ্ধি দমন করে। এর ফলস্বরূপ, ফসল তোলার পরবর্তী সময়ে ব্যবহৃত ছত্রাকনাশকের প্রয়োজনীয়তা ৫০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব হয়েছে, যা খাদ্য সুরক্ষার মানদণ্ড বজায় রেখে রাসায়নিকের ব্যবহার কমানোর এক বিশাল সুযোগ এনে দিয়েছে।
এই প্রযুক্তির একটি বড় সুবিধা হলো এর অভিযোজন ক্ষমতা। আফন্ডো বিদ্যমান প্যাকেজিং লাইনগুলিতে সহজেই ব্যবহার করা যায়, ফলে সরবরাহ শৃঙ্খলে পরিচালনগত কোনো বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি হয় না। ওয়েস্টফালিয়া ফ্রুটের উদ্ভাবন প্রধান অ্যান্ড্রু মিচেল জানিয়েছেন যে, এই আবরণী স্বাদ বা গন্ধের ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না, যা গ্রাহকদের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা বাড়াচ্ছে। বর্তমানে ইউরোপের নির্বাচিত গ্রাহকদের সাথে বাণিজ্যিক পরীক্ষা চলছে এবং শীঘ্রই জৈব শস্যের জন্য একটি বিশেষ জৈব-আবরণী বিকল্প আনার পরিকল্পনা রয়েছে। অ্যাগ্রোসাসটেইনের সিইও ওলগা ডাবি নিশ্চিত করেছেন যে, ওয়েস্টফালিয়ার সাথে এই অংশীদারিত্ব সরবরাহ শৃঙ্খলের সমন্বয়কে উন্নত করছে।
এই ধরনের জৈব আবরণীগুলি কেবল ফল বা সবজির ক্ষেত্রেই নয়, বরং কলা, আম, সাইট্রাস, ন্যাচারিন এবং চেরি সহ বিভিন্ন উচ্চ-মূল্যের পচনশীল পণ্যের ক্ষেত্রেও কার্যকারিতা দেখিয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই আবরণীগুলি জলের ক্ষতি রোধ করে, শ্বাস-প্রশ্বাসের হার কমিয়ে দেয় এবং খাদ্যের পুষ্টিগুণ ও সতেজতা দীর্ঘ সময় ধরে অক্ষুণ্ণ রাখে। এই পদক্ষেপগুলি কেবল ব্যবসার উন্নতি নয়, বরং সামগ্রিক ব্যবস্থার উন্নতির দিকে ইঙ্গিত করে, যেখানে প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পদের সদ্ব্যবহার এবং পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীলতা একইসাথে নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে।