বর্তমান জীবনের ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে কর্টিসল হরমোন নিয়ন্ত্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, 'মনোযোগী খাদ্যাভ্যাস' বা মাইন্ডফুল ইটিং একটি কার্যকরী কৌশল হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে। এই পদ্ধতিতে খাবারের প্রতি সম্পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া হয়, যেখানে খাবারের স্বাদ, গন্ধ, গঠন এবং শরীরের ক্ষুধা ও তৃপ্তির সংকেতগুলির উপর জোর দেওয়া হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, মনোযোগী খাদ্যাভ্যাস কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিভিন্ন সমীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে, মানসিক চাপজনিত খাদ্যাভ্যাস নিয়ে করা মননশীলতা (mindfulness) বিষয়ক হস্তক্ষেপ কর্টিসলের মাত্রা এবং সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। এটি মানসিক চাপের কারণে সৃষ্ট হরমোনের আকস্মিক বৃদ্ধিকে প্রশমিত করার সম্ভাবনা তুলে ধরে।
মনোযোগী খাদ্যাভ্যাস অনুশীলন করার জন্য কিছু সহজ উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। খাবার সময় তাড়াহুড়ো না করে ধীরে ধীরে খাওয়া, চারপাশের সমস্ত বিক্ষেপ দূর করা এবং নিজের শরীরের ক্ষুধা ও তৃপ্তির সংকেতগুলিতে মনোযোগ দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এই কৌশলগুলি খাদ্যের সাথে একটি স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে এবং কর্টিসলের মাত্রা ভারসাম্যপূর্ণ রাখতে ও সামগ্রিক সুস্থতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। অতিরিক্ত গবেষণায় দেখা গেছে যে, খাদ্যাভ্যাস ছাড়াও দৈনন্দিন জীবনে মননশীলতার অনুশীলন সামগ্রিক মানসিক চাপ উপলব্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিদিন 10-15 মিনিটের জন্য ধ্যান গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের লালা কর্টিসলের মাত্রা হ্রাসের সাথে যুক্ত ছিল। এটি ইঙ্গিত দেয় যে মননশীলতা চাপ নিয়ন্ত্রণের একটি ব্যাপক প্রক্রিয়া, যেখানে খাদ্যাভ্যাস কেবল একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
এই পদ্ধতির একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো এটি কেবল শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতিই করে না, বরং মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও গভীর প্রভাব ফেলে। মনোযোগী খাদ্যাভ্যাস উদ্বেগ, বিষণ্ণতা এবং অন্যান্য মানসিক চাপজনিত সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, যারা মনোযোগী খাদ্যাভ্যাস অনুশীলন করেন, তাদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ এবং কর্টিসলের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিয়মিত ধ্যান কর্টিসলের মাত্রা 20-30% কমাতে পারে। ধ্যান 25% মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে।
সুতরাং, মনোযোগী খাদ্যাভ্যাস কেবল একটি খাদ্য গ্রহণ পদ্ধতি নয়, এটি একটি জীবনধারা যা শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। এটি আমাদের খাদ্যাভ্যাসের প্রতি আরও সচেতন হতে এবং জীবনের প্রতি আরও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে সাহায্য করে।