গ্যাংওন প্রদেশের মনোরম পরিবেশে আয়োজিত হাওয়াচন সানচেওনও বরফ উৎসব কোরিয়ার শীতকালীন ঐতিহ্যবাহী খাদ্যাভ্যাসের এক চমৎকার প্রদর্শনী। এই উৎসবটি কেবল বরফের ওপর মাছ ধরার আনন্দই দেয় না, বরং শীতের রুক্ষতার মাঝে উষ্ণতার এক ভিন্ন অনুভূতিও এনে দেয়। এই উৎসবের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সানচেওনও বা পাহাড়ি ট্রাউট মাছ, যা তার কোমল স্বাদের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।
উৎসবস্থলে আগত পর্যটকরা তাদের ধরা মাছ সঙ্গে সঙ্গে উপভোগ করার সুযোগ পান। ধরা মাছগুলি হয় সরাসরি গ্রিল করে বা সাশিমি (কাঁচা মাছ) আকারে নির্দিষ্ট কেন্দ্রে পরিবেশন করা হয়। এই তাজা মাছের স্বাদ গ্রহণ এক অনন্য অভিজ্ঞতা, যা শীতের শীতলতাকে ভুলিয়ে দেয়। অনেকে মাছ ধরে সেটিকে গ্রিল করার পাশাপাশি সতেজ থাকতেই সাশিমি হিসেবে চেখে দেখেন, যা এই উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ। কিছু স্থানে বারবিকিউ করার জন্য প্রস্তুত স্থান রয়েছে, যেখানে মাছগুলো মিষ্টি আলুর মতো করে ভাজা হয়।
তবে উৎসবের আকর্ষণ শুধু মাছের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। খাদ্যরসিকদের জন্য রাস্তার ধারে সারি সারি স্টলে ঐতিহ্যবাহী কোরিয়ান শীতকালীন খাবার পাওয়া যায়। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো তেওকপোক্কি (ঝাল চালের কেক) এবং হোত্তোক (মিষ্টি প্যানকেক)। এই খাবারগুলো শীতের কনকনে ঠান্ডায় এক আরামদায়ক উষ্ণতা প্রদান করে। উৎসবের থিম হলো 'কখনোই না জমাট বাঁধা উষ্ণ হৃদয়, কখনোই না গলে যাওয়া স্মৃতি', যা এই অঞ্চলের পরিচ্ছন্ন জলের পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
হাওয়াচন চেওন নদীতে বরফের পুরু স্তর জমে গেলে এই উৎসব শুরু হয়, যা প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষকে আকর্ষণ করে। এই সানচেওনও মাছকে 'উপত্যকার রানী' বলা হয়, কারণ এটি কেবল প্রথম শ্রেণির পরিষ্কার জলে, বিশেষত ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা থাকলেই বেঁচে থাকতে পারে। এই মাছ অ্যামিনো অ্যাসিড, প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিনে সমৃদ্ধ।
মাছ ধরার অভিজ্ঞতা ছাড়াও, উৎসবে বিভিন্ন ধরনের বিনোদনমূলক কার্যক্রমের ব্যবস্থা থাকে। বরফের ওপর মাছ ধরা, বর্শা দিয়ে মাছ ধরা এবং এমনকি খালি হাতে মাছ ধরার মতো রোমাঞ্চকর প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেন দর্শনার্থীরা। এই খালি হাতে মাছ ধরার জন্য অংশগ্রহণকারীরা তাদের শীতের পোশাক খুলে ঠান্ডা জলে ঝাঁপ দেন, যা তাদের মধ্যে এক অভূতপূর্ব উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। এছাড়াও, বরফ স্লেডিং, আইস ফুটবল, এবং স্নো ভাস্কর্য দেখার সুযোগ থাকে। পর্যটকদের জন্য উৎসবের অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করতে সাংস্কৃতিক গ্রামও তৈরি করা হয়, যেখানে ডালগোনা মিষ্টি তৈরি এবং তীরন্দাজির মতো ঐতিহ্যবাহী কোরিয়ান কার্যক্রমে অংশ নেওয়া যায়। উৎসব প্রাঙ্গণে বিশ্বখ্যাত একটি ইনডোর আইস ভাস্কর্য প্লাজাও রয়েছে।
এই উৎসবটি কেবল খাদ্য বা বিনোদনের কেন্দ্র নয়, এটি মানব অভিজ্ঞতার এক প্রতিচ্ছবি যেখানে প্রতিকূলতার মাঝেও সম্মিলিত আনন্দ ও ঐতিহ্যকে ধারণ করার এক সুযোগ নিহিত। শীতল পরিবেশ সত্ত্বেও, মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং স্থানীয় রীতিনীতির প্রতি শ্রদ্ধা এক গভীর সংযোগের বার্তা বহন করে, যা প্রতিটি অংশগ্রহণকারীর মনে এক স্থায়ী ছাপ ফেলে যায়। এই ধরনের আয়োজনগুলি দেখায় যে কীভাবে কঠিন সময়েও মানুষ একত্রিত হয়ে উষ্ণতা ও সহযোগিতার মাধ্যমে নতুন স্মৃতি তৈরি করতে পারে।
