বাঙালির দৈনন্দিন পাতে ভাত এক অপরিহার্য উপাদান হলেও, এটিকে নিখুঁতভাবে ঝরঝরে রূপে পরিবেশন করা অনেকের কাছেই একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রায়শই ভাত অতিরিক্ত নরম বা আঠালো হয়ে যায়, যা খাবারের সামগ্রিক আনন্দকে ম্লান করে দেয়। এই সাধারণ সমস্যাটিকে রন্ধনশৈলী উন্নয়নের একটি সুযোগ হিসেবে দেখা যেতে পারে। প্রখ্যাত রন্ধনশিল্পী ক্রিস কার্পেন্টিয়ার একটি সহজ কিন্তু অত্যন্ত কার্যকর কৌশল প্রকাশ করেছেন, যা ভাতকে আঠালো হওয়া থেকে রক্ষা করে এবং প্রতিটি দানা পৃথক রাখতে সাহায্য করে।
কার্পেন্টিয়ারের কৌশল অনুযায়ী, ভাত রান্নার জলে সামান্য পরিমাণে লেবুর রস অথবা ভিনিগার যোগ করা আবশ্যক। এই অম্লীয় উপাদানটি স্টার্চ কণাগুলিকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করে। এর ফলে, রান্নার সময় স্টার্চের অতিরিক্ত নিঃসরণ রোধ হয়, এবং ভাত রান্নার শেষে প্রতিটি চালের দানা দৃঢ়, পৃথক এবং তুলতুলে হয়ে ওঠে। রন্ধনশিল্পীদের মতে, লেবুর অ্যাসিড চালের নিজস্ব আঠালো ভাবকে কার্যকরভাবে প্রতিহত করে, যা ভাতকে পুরোপুরি ঝরঝরে করে তোলে।
তবে, নিখুঁত ঝরঝরে ভাতের জন্য কেবল এই একটি কৌশলই যথেষ্ট নয়; একাধিক ধাপ অনুসরণ করা অত্যাবশ্যক। চাল প্রস্তুত করার পূর্বে এটিকে ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া জরুরি, যাতে অতিরিক্ত স্টার্চ দূর হয় এবং চাল একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে না যায়। কিছু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী, সরু চাল রান্নার আগে অন্তত ত্রিশ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে তা আরও বেশি ঝরঝরে হয়। রান্নার জন্য জলের সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করাও গুরুত্বপূর্ণ; কম জল হলে ভাত নীচে লেগে যেতে পারে, আর বেশি জল হলে তা নরম বা মাড়যুক্ত হয়ে যায়।
রান্নার সময় তাপমাত্রার নিয়ন্ত্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যার জন্য ভারী তলার পাত্র ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়, যা তাপকে সমানভাবে সঞ্চালিত করে। অনেকে ফুটন্ত জলে চাল দেওয়ার পক্ষে মত দেন, কারণ এতে চালের বাইরের স্তর দ্রুত সেদ্ধ হয় এবং দানা কম ভাঙে। রান্নার সময় ঢাকনা তুলে বারবার পরীক্ষা করা উচিত নয়, কারণ এতে ভেতরের বাষ্প বেরিয়ে যায় এবং রান্নার সঠিক সময় ও তাপমাত্রা ব্যাহত হয়। এছাড়াও, স্বাদ ও গঠন উন্নত করতে চাল অল্প তেলে হালকা ভেজে নেওয়া যেতে পারে।
রান্না শেষ হওয়ার পর একটি অপরিহার্য ধাপ হলো পাত্রটিকে সরিয়ে রেখে অন্তত পাঁচ থেকে দশ মিনিট 'বিশ্রাম' দেওয়া। এই সময়কালে, ভাতের ভেতরে থাকা বাষ্প বা আর্দ্রতা সমানভাবে সমস্ত দানার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, যা চূড়ান্তভাবে হালকা ও ঝরঝরে টেক্সচার নিশ্চিত করে। এরপর কাঁটাচামচ দিয়ে আলতো করে ভাতগুলো ছাড়িয়ে নিলেই পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত হয় সুস্বাদু, ঝরঝরে ভাত, যেখানে প্রতিটি দানা স্বতন্ত্রতা বজায় রাখে।
