কাবুলের একটি বেসরকারি স্কুল স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে "স্বাস্থ্যকর বুধবার" নামে একটি নতুন উদ্যোগ চালু করেছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা স্কুল প্রাঙ্গণে নিজেদের হাতে তৈরি পুষ্টিকর খাবার তৈরি ও উপভোগ করে, যা বাজারের অস্বাস্থ্যকর খাবারকে প্রতিস্থাপন করতে সাহায্য করে। এই উদ্যোগটি প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষার্থীরা কেবল খাবার তৈরিই শেখে না, বরং এটি তাদের মধ্যে একটি সম্প্রদায়িক বন্ধনও তৈরি করে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের রান্নার কৌশল শেখানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবারের গুরুত্ব সম্পর্কেও অবহিত করেন।
এই "স্বাস্থ্যকর বুধবার" কর্মসূচিটি পরিবারগুলোর উপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অনেক পরিবার এখন স্কুলগুলোতে স্বাস্থ্যকর ঘরে তৈরি খাবার পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, বাজারের প্রক্রিয়াজাত খাবার শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এই ধরনের খাবারে প্রায়শই কৃত্রিম রঙ, ফ্লেভার এবং অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট ব্যবহার করা হয়, যা শিশুদের স্থূলতা, দাঁতের সমস্যা এবং দীর্ঘমেয়াদী রোগের কারণ হতে পারে। ডঃ মোহাম্মদ হুমায়ুন লুদিন, একজন পুষ্টিবিদ, বলেছেন যে এই ধরনের স্ন্যাকস শিশুদের ক্ষুধা দমন করে এবং অপুষ্টি ও রক্তস্বল্পতার কারণ হতে পারে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে এই খাবারগুলিতে প্রায়শই এমন উপাদান থাকে যা হজম করা কঠিন এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অনেক সময় এই খাবারগুলি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সংরক্ষণ করা হয়, যা ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর সুযোগ করে দেয়।
অন্যদিকে, ঘরে তৈরি খাবার শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে অপরিহার্য। এটি শিশুদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আফগানিস্তানে অপুষ্টি একটি বড় সমস্যা, যেখানে অনেক শিশু প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) আফগানিস্তানে স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিশুদের পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করে, যা তাদের পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে এবং সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। এই প্রোগ্রামটি প্রায় দুই দশক ধরে চালু রয়েছে এবং লক্ষ লক্ষ শিশুকে পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করেছে।
কাবুলের এই স্কুলটির "স্বাস্থ্যকর বুধবার" উদ্যোগটি একটি চমৎকার উদাহরণ যে কীভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই ধরনের উদ্যোগগুলি কেবল শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যই উন্নত করে না, বরং পরিবার এবং বৃহত্তর সম্প্রদায়কেও ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। এটি একটি সুস্থ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভিত্তি স্থাপন করে, যেখানে পুষ্টিকর খাবার জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।