২০২৫ সাল নাগাদ, ফারমেন্টেড বা গাঁজন করা খাবার বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য-সচেতন ভোক্তাদের মধ্যে অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই প্রাচীন খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি, যা উপকারী ব্যাকটেরিয়া এবং অণুজীবের মাধ্যমে খাদ্যকে রূপান্তরিত করে, তা কেবল খাবারের স্বাদ এবং সংরক্ষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে না, বরং হজমশক্তি বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফারমেন্টেড খাবারের এই উত্থানের পেছনে মূল কারণ হলো মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এবং সুষম খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান সচেতনতা। প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ এই খাবারগুলি অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।
সাম্প্রতিক গবেষণাগুলি অন্ত্র এবং মস্তিষ্কের মধ্যেকার সংযোগ (gut-brain axis) এবং ফারমেন্টেড খাবারের প্রভাবের উপর আলোকপাত করেছে। এই খাবারগুলি সেরোটোনিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদনে সহায়তা করে, যা মেজাজ নিয়ন্ত্রণ এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, নিয়মিত ফারমেন্টেড খাবার গ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতার লক্ষণগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
এই প্রবণতার সাথে তাল মিলিয়ে, বাজারে কিমচি, কম্বুচা, টেম্পেহ, কেফির, মিসো, দই, আচার, নাট্টো এবং পনিরের মতো বিভিন্ন ধরণের ফারমেন্টেড খাবারের নতুন নতুন উদ্ভাবন এবং বৈচিত্র্য দেখা যাচ্ছে। কিমচি, যা গাঁজন করা সবজি ও মশলার একটি ঐতিহ্যবাহী কোরিয়ান খাবার, তা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এর হজম সহায়ক গুণাবলী এবং পুষ্টিগুণ বৃদ্ধির জন্য। কম্বুচা, একটি গাঁজন করা চা পানীয়, প্রোবায়োটিক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি চমৎকার উৎস হিসেবে পরিচিত। টেম্পেহ, গাঁজন করা সয়াবিন থেকে তৈরি, প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস এবং এটি হজমশক্তি বাড়াতেও সহায়ক। কেফির, একটি গাঁজন করা দুগ্ধজাত পানীয়, প্রোবায়োটিকের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। মিসো, গাঁজন করা সয়াবিন পেস্ট, যা জাপানি রান্নায় বহুল ব্যবহৃত, তা অন্ত্রের প্রদাহ কমাতে সহায়ক।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৫ সালে বিশ্বব্যাপী ফারমেন্টেড খাবারের বাজার প্রায় ১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে এবং ২০৩৩ সাল নাগাদ এটি ২৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে, যা বার্ষিক ৭% চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বৃদ্ধির পেছনে প্রধান চালিকাশক্তি হলো স্বাস্থ্যকর ও পরিবেশ-বান্ধব খাদ্যাভ্যাসের প্রতি ভোক্তাদের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ। এছাড়াও, প্ল্যান্ট-বেসড ডায়েট এবং ফাংশনাল ফুডের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিও এই বাজারকে প্রসারিত করছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ফারমেন্টেড খাবারগুলি কেবল স্বাস্থ্যের জন্যই উপকারী নয়, বরং এগুলি পরিবেশগতভাবেও টেকসই। গাঁজন প্রক্রিয়ায় কম শক্তি এবং জল প্রয়োজন হয়, যা অন্যান্য খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতির তুলনায় পরিবেশের উপর কম প্রভাব ফেলে। এছাড়াও, এই খাবারগুলি খাদ্য অপচয় কমাতে সাহায্য করে, কারণ গাঁজন প্রক্রিয়া খাবারের শেলফ-লাইফ বাড়িয়ে তোলে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এবং সুষম খাদ্যাভ্যাসের সন্ধানে, ফারমেন্টেড খাবারগুলি ২০২৫ সালে একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে, যা আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।