কফি কেবল একটি পানীয় নয়, এটি বিশ্বজুড়ে সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিভিন্ন দেশে কফির প্রস্তুতি, পরিবেশন এবং উপভোগের পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন, যা তাদের নিজস্ব ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটায়।
ইথিওপিয়া, যেখানে কফির জন্ম, সেখানে ‘বুনা তেতু’ নামে পরিচিত কফি অনুষ্ঠানটি একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক রীতি। এই অনুষ্ঠানে কফি বিন রোস্ট করা, গুঁড়ো করা এবং ঐতিহ্যবাহী ‘জেবেনা’ পাত্রে তৈরি করা হয়। এটি আতিথেয়তা ও বন্ধুত্বের প্রতীক এবং প্রায়শই গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অনুষ্ঠানে পালিত হয়। ইতালিতে এসপ্রেসো হলো কফি সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু। এটি একটি শক্তিশালী, ঘন কফি যা সাধারণত বারে দাঁড়িয়ে পান করা হয়। কাপুচিনো, যা এসপ্রেসো, ভাপানো দুধ এবং ফেনা দিয়ে তৈরি, তা ইতালিতে সকালের নাস্তার সঙ্গেই বেশি উপভোগ করা হয়।
তুরস্কের কফি বিশ্বজুড়ে পরিচিত এবং এটি ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃত। ‘জেজভে’ নামক একটি বিশেষ পাত্রে মিহি করে গুঁড়ো করা কফি, জল এবং চিনি দিয়ে এটি তৈরি করা হয়। এই কফি পরিবেশনের সাথে সাথে এর তলানিতে থাকা গুঁড়ো দিয়ে ভাগ্য গণনার রেওয়াজও প্রচলিত আছে। গ্রীসে ‘ফ্রাপ্পে’ নামক ঠান্ডা কফি খুব জনপ্রিয়, যা ইনস্ট্যান্ট কফি, চিনি, বরফ এবং জল দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি ১৯৫৭ সালে থেসালোনিকিতে দুর্ঘটনাক্রমে আবিষ্কৃত হয়েছিল এবং বর্তমানে এটি গ্রীক সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
সৌদি আরবে ‘কাহওয়া’ বা আরবি কফি হলো আতিথেয়তার প্রতীক। এটি সাধারণত হালকা রোস্ট করা কফি বিন, এলাচ এবং দারুচিনি দিয়ে তৈরি করা হয় এবং এটি উষ্ণতা ও বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে পরিবেশন করা হয়। কলম্বিয়ার কফি তার সমৃদ্ধ স্বাদের জন্য বিখ্যাত। ঐতিহ্যগতভাবে, এটি একটি কাপড়ের ফিল্টার ব্যবহার করে তৈরি করা হয়, যা একটি গভীর স্বাদ প্রদান করে। কিউবান ‘ক্যাফে কন লেচে’ এসপ্রেসো এবং গরম দুধের মিশ্রণ, যা প্রায়শই চিনি দিয়ে মিষ্টি করা হয়। এটি কিউবান সকালের নাস্তার একটি অপরিহার্য অংশ।
বিশ্বজুড়ে কফির এই বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্যগুলি কেবল পানীয়ের ভিন্নতাই নয়, বরং প্রতিটি সংস্কৃতির নিজস্ব গল্প, রীতিনীতি এবং সামাজিক বন্ধনের প্রতিফলন ঘটায়। কফির প্রতিটি কাপ যেন এক একটি নতুন অভিজ্ঞতা, যা আমাদের বিশ্বকে আরও কাছ থেকে জানতে সাহায্য করে।