আন্দ্রেয়াস ভিয়েলের পরিচালিত নতুন ডকুমেন্টারি 'রিফেনস্টাইন' জার্মান চলচ্চিত্র নির্মাতা লেনী রিফেনস্টাইন এবং নাৎসি শাসনের মধ্যেকার জটিল সম্পর্ককে তুলে ধরেছে। চলচ্চিত্রটি ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে প্রিমিয়ার হয়েছিল এবং সেখানে 'সিনেমা অ্যান্ড আর্টস অ্যাওয়ার্ড' লাভ করে। রিফেনস্টাইন, যিনি 'ট্রাইম্ফ অফ দ্য উইল'-এর মতো প্রচারণামূলক চলচ্চিত্রের জন্য পরিচিত, অ্যাডলফ হিটলারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন।
তাঁর মৃত্যুর পর, রিফেনস্টাইনের বিশাল আর্কাইভ, যার মধ্যে তাঁর হোম ভিডিও এবং ব্যক্তিগত চিঠিপত্র অন্তর্ভুক্ত ছিল, তা প্রুশিয়ান কালচারাল হেরিটেজ ফাউন্ডেশন অধিগ্রহণ করে। এই ডকুমেন্টারিটি রিফেনস্টাইনের নাৎসি নৃশংসতা সম্পর্কে অজ্ঞতার দাবিগুলোকে পরীক্ষা করে, সেগুলোকে আর্কাইভাল ফুটেজ এবং সাক্ষাৎকারের সাথে তুলনা করে। একটি উল্লেখযোগ্য অংশে রিফেনস্টাইনকে এলফ্রিডে ক্রেচমার, একজন নাৎসি-বিরোধী কর্মীর সাথে দেখা যায়, যিনি রিফেনস্টাইনের অজ্ঞতার দাবির প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। ভিয়েলের চলচ্চিত্রটি রিফেনস্টাইনের ইহুদি বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যুর সাথে সম্ভাব্য জড়িত থাকার বিষয়টিও আলোচনা করে। যদিও তিনি পোল্যান্ডে একটি মৃত্যুদণ্ড প্রত্যক্ষ করার কথা স্বীকার করেছিলেন, তবে প্রমাণ থেকে জানা যায় যে তাঁর কথাগুলো ইহুদি শ্রমিকদের গুলি করার নির্দেশ হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল।
ডকুমেন্টারিটি রিফেনস্টাইনের কাজের শিক্ষাগত ব্যবহারের পক্ষে যুক্তি দেয়, কারণ তাঁর চলচ্চিত্র নির্মাণ কৌশলগুলি আজও প্রভাবশালী। ভিয়েল রিফেনস্টাইনের প্রচার পদ্ধতির সাথে সমসাময়িক বিভেদ সৃষ্টিকারী রাজনৈতিক বক্তব্যের তুলনা করেছেন, যা চলচ্চিত্রটিকে একটি সতর্কবার্তা হিসেবে উপস্থাপন করে। রিফেনস্টাইনের আর্কাইভ থেকে প্রাপ্ত তথ্য, যেমন ১৯৫২ সালের একটি চিঠি, ইঙ্গিত দেয় যে তিনি কোনিস্কের গণহত্যায় পরোক্ষভাবে জড়িত থাকতে পারেন, যেখানে তাঁর নির্দেশাবলী "ইহুদিদের সরিয়ে দাও" হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল, যা পরে গুলি চালানোর ঘটনায় পরিণত হয়। ১৯৭৬ সালের একটি টেলিভিশন টক শো-তে এলফ্রিডে ক্রেচমারের সাথে রিফেনস্টাইনের একটি বিতর্কিত সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষও চলচ্চিত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেখানে ক্রেচমার রিফেনস্টাইনের অজ্ঞতার দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন।
ভিয়েল তাঁর চলচ্চিত্রে রিফেনস্টাইনের কাজের শিক্ষাগত গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন, কারণ তাঁর চলচ্চিত্র নির্মাণ কৌশলগুলি, যেমন লো-অ্যাঙ্গেল শট, আজও চলচ্চিত্র নির্মাণে প্রভাব ফেলে। রিফেনস্টাইনের চলচ্চিত্রগুলি, যেমন 'ট্রাইম্ফ অফ দ্য উইল' (১৯৩৫) এবং 'অলিম্পিয়া' (১৯৩৮), নাৎসি শাসনের প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এবং বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছিল। রিফেনস্টাইন তাঁর দীর্ঘ জীবনে তাঁর ভাবমূর্তি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছিলেন এবং তাঁর উত্তরাধিকারকে shaping করার জন্য কাজ করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর, তাঁর বিশাল আর্কাইভ প্রুশিয়ান কালচারাল হেরিটেজ ফাউন্ডেশনকে দান করা হয়, যা তাঁর জীবনের বিভিন্ন পর্যায় এবং কাজের নথি অন্তর্ভুক্ত করে। এই ডকুমেন্টারিটি কেবল রিফেনস্টাইনের জীবনের একটি গভীর বিশ্লেষণই নয়, বরং এটি সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও প্রাসঙ্গিক, কারণ এটি প্রচারণার মাধ্যমে বিভেদ সৃষ্টিকারী বক্তব্যের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে।