সূর্যের বাইরের বায়ুমণ্ডল, যা করোনা নামে পরিচিত, সেখানে এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে চলেছে, যা 'করোনাল রেইন' বা 'করোনাল বৃষ্টি' নামে পরিচিত। এটি এমন এক প্রক্রিয়া যেখানে অত্যন্ত উত্তপ্ত প্লাজমা ঠান্ডা হয়ে ঘনীভূত হয় এবং চৌম্বকীয় ক্ষেত্র বরাবর সূর্যের পৃষ্ঠের দিকে পতিত হতে থাকে। এই পতনশীল প্লাজমা সেকেন্ডে প্রায় ২ লক্ষ কিলোমিটার পর্যন্ত গতি অর্জন করতে পারে।
এই ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন সূর্যের চৌম্বকীয় লুপগুলি বিভিন্ন উত্তাপ প্রক্রিয়ার কারণে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। এই অস্থিরতা প্লাজমার দ্রুত শীতলীকরণ এবং ঘনীভবনের দিকে পরিচালিত করে, যার ফলে করোনাল বৃষ্টির সৃষ্টি হয়। পতিত প্লাজমা চৌম্বকীয় রেখা অনুসরণ করে একটি ধনুকের মতো পথে নেমে আসে। ডঃ প্যাট্রিক অ্যান্টোলিন, যিনি ইউনিভার্সিটি অফ সেন্ট অ্যান্ড্রুজ-এর গবেষক, তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে করোনাল বৃষ্টি তাপীয় অস্থিরতার সাথে যুক্ত, যা সূর্যের আয়নিত প্লাজমায় মুক্ত ইলেকট্রনের পুনর্মিলনের কারণ হয়।
এই ঘটনাটি কেবল দৃশ্যত আকর্ষণীয়ই নয়, এটি সূর্যের আচরণ বোঝার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। করোনাল বৃষ্টির অধ্যয়ন সূর্যের চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের গতিবিদ্যা এবং এর বাইরের বায়ুমণ্ডলের প্রক্রিয়াগুলি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। এই ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা সৌর কার্যকলাপের মডেলগুলিকে আরও উন্নত করতে এবং মহাকাশে আবহাওয়ার পূর্বাভাস উন্নত করতে সক্ষম হন, যা পৃথিবীতেও প্রভাব ফেলতে পারে। সৌর ঝড় বা জিওম্যাগনেটিক স্টর্ম পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করতে পারে, যা বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট পরিষেবার মতো প্রযুক্তিগত পরিকাঠামোতে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। ১৮৫৯ সালের ক্যারিংটন ইভেন্ট এবং ১৯৮৯ সালের ঘটনা এর উদাহরণ, যা টেলিগ্রাফ নেটওয়ার্ক এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাকে ব্যাহত করেছিল।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, সূর্য ছাড়াও অন্যান্য নক্ষত্রেও করোনাল বৃষ্টির মতো ঘটনা পরিলক্ষিত হয়েছে। একটি ছোট, শীতল নক্ষত্র vB 10-এর সৌর শিখার উচ্চ-রেজোলিউশন স্পেকট্রোস্কোপিক পর্যবেক্ষণ এই ধরনের ঘটনার সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছে। এটি অতি-শীতল বামন নক্ষত্রে এই ঘটনার প্রথম সম্ভাব্য প্রমাণ চিহ্নিত করেছে। করোনাল বৃষ্টি বোঝা নাক্ষত্রিক বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি করে এবং জ্যোতির্পদার্থবিদ্যার বৃহত্তর ক্ষেত্রে অবদান রাখে।
সাম্প্রতিক গবেষণাগুলি ইঙ্গিত দেয় যে করোনাল বৃষ্টি ধীর সৌর বায়ুর উৎপত্তির সাথে সম্পর্কিত হতে পারে, যেখানে প্লাজমা বন্ধ চৌম্বকীয় রেখা থেকে খোলা রেখায় স্থানান্তরিত হয়। এছাড়াও, সোলার অরবিটার মহাকাশযানের গবেষণা নিশ্চিত করেছে যে করোনাল বৃষ্টি পূর্বে ধারণার চেয়ে অনেক বেশি সাধারণ এবং এটি করোনার গঠন ও তাপগতিবিদ্যা অধ্যয়নের জন্য একটি পরোক্ষ প্রোব হিসাবে কাজ করতে পারে।