পৃথিবী বর্তমানে একটি শক্তিশালী জিওম্যাগনেটিক ঝড়ের সম্মুখীন হয়েছে, যা গত তিন মাসের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র। এই মহাজাগতিক ঘটনাটি সূর্যের একটি অত্যন্ত ঘন প্লাজমা স্রোতের কারণে ঘটেছে, যা পূর্ববর্তী কয়েক দিনের একাধিক সৌর কার্যকলাপের ফলস্বরূপ তৈরি হয়েছে। মহাকাশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (RAS) ল্যাবরেটরি অফ সোলার অ্যাক্টিভিটি এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এই ঝড়টি জি৩ স্তরের, যা গত ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫-এ ঘটে যাওয়া অনুরূপ একটি ঝড়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। সেই সময়, একটি বৃহৎ করোনাল হোল থেকে নির্গত ত্বরান্বিত সৌর বায়ুর কারণে জিওম্যাগনেটিক ঝড় সৃষ্টি হয়েছিল। বর্তমান ঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন কারণ এটি প্রচলিত মডেলগুলির দ্বারা ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না এবং এই ধরনের ঝড়ের জন্য কোনও পূর্বানুমানমূলক মডেল তৈরি করা হয়নি। সৌর বায়ু এবং এর প্লাজমার ঘনত্ব জিওম্যাগনেটিক কার্যকলাপের তীব্রতা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উচ্চ ঘনত্বযুক্ত প্লাজমা, বিশেষ করে যখন এটি পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে দক্ষিণ দিকে সংযুক্ত হয়, তখন এটি চৌম্বকীয় ক্ষেত্রকে আরও বেশি শক্তি প্রবেশ করতে দেয়, যা ঝড়ের তীব্রতা বাড়িয়ে তোলে।
এই ধরনের জিওম্যাগনেটিক ঝড় পৃথিবীর প্রযুক্তিগত ব্যবস্থার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। জি৩ স্তরের ঝড়গুলি রেডিও যোগাযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, বিশেষ করে উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি (HF) রেডিওতে, যা বিমান এবং জাহাজের যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি জিপিএস সংকেতকেও প্রভাবিত করতে পারে, যার ফলে নির্ভুলতা হ্রাস পায়। স্যাটেলাইটগুলিও বিকিরণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে এবং বায়ুমণ্ডলীয় টান বাড়ার কারণে তাদের কক্ষপথ পরিবর্তন হতে পারে। পাওয়ার গ্রিডগুলিও জিওম্যাগনেটিক্যালি ইন্ডুসড কারেন্ট (GICs) দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে, যা ট্রান্সফরমার এবং অন্যান্য উপাদানের ক্ষতি করতে পারে, যদিও এই স্তরের ঝড়গুলি সাধারণত বড় ধরনের ব্ল্যাকআউটের কারণ হয় না।
বিজ্ঞানীরা সৌর কার্যকলাপের উপর নিবিড় নজর রাখছেন। এই ঘটনাটি মহাকাশের আবহাওয়ার উপর আমাদের বর্তমান জ্ঞানের সীমাবদ্ধতাগুলি তুলে ধরেছে এবং ভবিষ্যতেও এই ধরনের ঘটনাগুলির পূর্বাভাস ও মোকাবিলার জন্য আরও গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে। প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে, এই ধরনের মহাজাগতিক ঘটনাগুলির প্রভাব বোঝা এবং প্রশমিত করার কৌশল তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।