২০২৫ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর, নাসা (NASA) এবং নোয়া (NOAA) সৌরজগৎ জুড়ে সূর্যের প্রভাব অনুসন্ধানের জন্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মিশন চালু করেছে। ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে একটি স্পেসএক্স ফ্যালকন ৯ (SpaceX Falcon 9) রকেটে করে নাসার আইএমএপি (IMAP), ক্যারুথার্স জিওকরোনা অবজারভেটরি (Carruthers Geocorona Observatory) এবং নোয়া-র এসডব্লিউএফও-এল১ (SWFO-L1) মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করা হয়। এই সম্মিলিত উদ্যোগটি মহাকাশের আবহাওয়া সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করবে এবং পৃথিবীর সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
আইএমএপি (IMAP) মিশনটি সৌরজগতের চারপাশের হেলিওস্ফিয়ার (heliosphere) নামক চৌম্বকীয় বুদ্বুদটির একটি মানচিত্র তৈরি করবে। এটি আমাদের সৌরজগতের প্রান্তের কণাগুলির মিথস্ক্রিয়া অধ্যয়ন করবে, যার মাধ্যমে মহাজাগতিক রশ্মি থেকে পৃথিবীকে কীভাবে হেলিওস্ফিয়ার রক্ষা করে, সে সম্পর্কে ধারণা উন্নত হবে। এই মিশনটি মহাকাশে উচ্চ-শক্তির কণা এবং সৌর বায়ুর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করবে, যা মহাকাশের আবহাওয়ার পূর্বাভাস উন্নত করতে সহায়ক হবে।
ক্যারুথার্স জিওকরোনা অবজারভেটরি (Carruthers Geocorona Observatory) পৃথিবীর এক্সোস্ফিয়ার (exosphere) বা বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে বাইরের স্তর নিয়ে গবেষণা করার জন্য নিবেদিত প্রথম মিশন। এটি সৌর ঝড় এবং ঋতু পরিবর্তনের প্রতি এক্সোস্ফিয়ারের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করবে। এই মহাকাশযানটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের এই অদৃশ্য অংশটি সম্পর্কে নতুন তথ্য সরবরাহ করবে, যা মহাকাশের আবহাওয়ার প্রভাব বুঝতে সাহায্য করবে।
নোয়া-র এসডব্লিউএফও-এল১ (SWFO-L1) মহাকাশযানটি ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট ১ (Lagrange Point 1) বা এল১ (L1) থেকে একটি অবিচ্ছিন্ন মহাকাশ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। এটি পৃথিবীর কাছাকাছি মহাকাশের অবস্থা এবং সৌর কার্যকলাপ ২৪/৭ পর্যবেক্ষণ করবে, যা সৌর ঝড় সম্পর্কে আগাম সতর্কতা প্রদানে সহায়ক হবে। এল১ (L1) বিন্দুটি সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যে অবস্থিত একটি বিশেষ স্থান, যা মহাকাশযানগুলিকে জ্বালানী সাশ্রয় করে দীর্ঘ সময় ধরে পর্যবেক্ষণে সহায়তা করে।
এই তিনটি মহাকাশযান উৎক্ষেপণের পর সফলভাবে তাদের কার্যকারিতা নিশ্চিত করেছে। আশা করা হচ্ছে, ২০২৬ সালের জানুয়ারির মধ্যে তারা তাদের এল১ (L1) গন্তব্যে পৌঁছাবে। এই মিশনগুলি মহাকাশের আবহাওয়ার পূর্বাভাস উন্নত করার পাশাপাশি মহাকাশচারী এবং প্রযুক্তির সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। নাসার ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক শন ডাফি (Sean Duffy) উল্লেখ করেছেন যে, এই উৎক্ষেপণ মহাকাশের আবহাওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় প্রস্তুতিকে আরও শক্তিশালী করবে।
মহাকাশের আবহাওয়া, যেমন সৌর শিখা (solar flares) এবং করোনাল মাস ইজেকশন (coronal mass ejections), পৃথিবীর যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ গ্রিড এবং স্যাটেলাইটগুলির উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এই নতুন মিশনগুলি মহাকাশের এই পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে আরও গভীর করবে এবং সম্ভাব্য বিপদ থেকে আমাদের রক্ষা করার জন্য উন্নত পূর্বাভাস ব্যবস্থা তৈরিতে সহায়তা করবে। জর্জ ক্যারুথার্স (George Carruthers)-এর মতো বিজ্ঞানীদের পূর্ববর্তী কাজগুলি, বিশেষ করে তাঁর উন্নত আল্ট্রাভায়োলেট ক্যামেরা (ultraviolet camera) প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে এই মিশনগুলি তৈরি করা হয়েছে, যা মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
এই উদ্যোগটি মহাকাশ বিজ্ঞান এবং পৃথিবীর সুরক্ষার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।