প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে সৌরজগতের গঠনের মাত্র তিন মিলিয়ন বছরের মধ্যে পৃথিবীর রাসায়নিক গঠন চূড়ান্ত হয়েছিল। ইউনিভার্সিটি অফ বার্নের ইনস্টিটিউট অফ জিওলজিক্যাল সায়েন্সেসের গবেষকদের একটি দল এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। তারা উল্কাপিণ্ড এবং পার্থিব শিলার আইসোটোপ ও উপাদানের ডেটা বিশ্লেষণ করে পৃথিবীর গঠন প্রক্রিয়া পুনর্গঠন করেছেন। ম্যাঙ্গানিজ-৫৩ (Mn-53) তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের উপর ভিত্তি করে একটি উচ্চ-নির্ভুল সময় পরিমাপ ব্যবস্থা ব্যবহার করে পৃথিবীর গঠনকাল নির্ভুলভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এই পদ্ধতিটি প্রায় এক মিলিয়ন বছরের কম নির্ভুলতার সাথে বয়স নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে, যা বিলিয়ন বছরের পুরনো পদার্থের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, আদিম পৃথিবী ছিল একটি শুষ্ক, পাথুরে গ্রহ, যা জীবনের জন্য অপরিহার্য উপাদানগুলি থেকে বঞ্চিত ছিল। জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্বায়ী উপাদান যেমন জল এবং কার্বন যৌগগুলি পরবর্তীকালে একটি গ্রহাণু সংঘর্ষের মাধ্যমে পৃথিবীতে এসেছিল। এই সংঘর্ষটি সম্ভবত থিয়া নামক একটি গ্রহের সাথে হয়েছিল, যা আমাদের চাঁদ গঠনের তত্ত্বেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই মহাজাগতিক ঘটনাটিই পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তুলেছিল। গবেষকরা উল্লেখ করেছেন যে, আদিম পৃথিবীর রাসায়নিক গঠনে উদ্বায়ী পদার্থের অভাব ছিল, যা জীবনের উদ্ভবের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ধারণা করা হয় যে, এই উপাদানগুলি পরবর্তীতে গ্রহাণু বা ধূমকেতুর মতো মহাজাগতিক বস্তু দ্বারা পৃথিবীতে সরবরাহ করা হয়েছিল। কিছু গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে, পৃথিবীর জলের একটি বড় অংশ এসেছে বরফ-সমৃদ্ধ গ্রহাণু থেকে, যা সৌরজগতের বাইরের অঞ্চল থেকে এসেছে। গবেষকরা ভবিষ্যতে এই সংঘর্ষের ঘটনাটি আরও বিস্তারিতভাবে জানতে এবং পৃথিবী ও চাঁদের ভৌত ও রাসায়নিক গঠন ব্যাখ্যা করার জন্য মডেল তৈরি করতে আগ্রহী। এই গবেষণাগুলি আমাদের গ্রহের উৎপত্তি এবং জীবনের বিকাশে মহাজাগতিক ঘটনার প্রভাব সম্পর্কে গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।