অন্ধকার পদার্থ কণার সন্ধানে নতুন দিগন্ত: QROCOCODILE পরীক্ষার যুগান্তকারী সাফল্য

সম্পাদনা করেছেন: Vera Mo

আন্তর্জাতিক গবেষক দল, যার নেতৃত্বে রয়েছে জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় এবং হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয় অফ জেরুজালেম, অন্ধকার পদার্থ (ডার্ক ম্যাটার) কণা শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে এক নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে। QROCODILE (Cryogenic Optimized Calorimeter for Observation of Dark Matter Interactions) পরীক্ষাটি অত্যন্ত ক্ষীণ সংকেত শনাক্তকরণে রেকর্ড-স্পর্শী সংবেদনশীলতা অর্জন করেছে। এই গবেষণাটি পদার্থবিজ্ঞানের এক গভীর রহস্য উন্মোচনের পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

মহাবিশ্বের প্রায় ৮৫% ভর অন্ধকার পদার্থ দ্বারা গঠিত হলেও, এর প্রকৃতি ও গঠন এখনও একটি বড় রহস্য। আলো বা তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণের সাথে এটি কোনো মিথস্ক্রিয়া করে না, ফলে একে শনাক্ত করা অত্যন্ত কঠিন। বহু দশক ধরে বিজ্ঞানীরা এই অদৃশ্য কণাগুলির অস্তিত্বের প্রমাণ খুঁজে চলেছেন। QROCODILE পরীক্ষাটি বিশেষভাবে 'হালকা' অন্ধকার পদার্থ কণা অনুসন্ধানে একটি নতুন পদ্ধতির উন্মোচন করেছে। এই পরীক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে অত্যাধুনিক সুপারকন্ডাক্টিং ডিটেক্টর, যা পরম শূন্য তাপমাত্রার কাছাকাছি শীতল অবস্থায় অতি ক্ষীণ শক্তির বিকিরণ পরিমাপ করতে সক্ষম। এই ডিটেক্টরগুলি ০.১১ ইলেকট্রন-ভোল্ট পর্যন্ত শক্তির পার্থক্য শনাক্ত করতে পারে, যা সাধারণ কণা পদার্থবিদ্যার পরীক্ষার চেয়ে লক্ষ লক্ষ গুণ কম। এই অভূতপূর্ব সংবেদনশীলতা পূর্ববর্তী পরীক্ষাগুলির তুলনায় হাজার হাজার গুণ ছোট ভরের অত্যন্ত হালকা অন্ধকার পদার্থ কণার অস্তিত্ব পরীক্ষা করার নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে।

প্রায় ৪০ ঘণ্টা ধরে পরম শূন্যের কাছাকাছি তাপমাত্রায় পরিচালিত এই বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায়, গবেষকরা অল্প সংখ্যক ব্যাখ্যাতীত সংকেত নথিভুক্ত করেছেন। যদিও এই সংকেতগুলি এখনও অন্ধকার পদার্থের নিশ্চিত প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে না (কারণ এগুলি কসমিক রশ্মি বা প্রাকৃতিক পটভূমি বিকিরণের কারণেও হতে পারে), তবুও এগুলি সাধারণ পদার্থের সাথে হালকা অন্ধকার পদার্থ কণার মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে নতুন সীমা নির্ধারণে সহায়ক হয়েছে। এই পরীক্ষার একটি অতিরিক্ত সুবিধা হলো সংকেতের দিক নির্দেশ করার ক্ষমতা। যেহেতু পৃথিবী ছায়াপথের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করে, তাই আশা করা যায় যে অন্ধকার পদার্থ কণাগুলি একটি নির্দিষ্ট দিক থেকে বেশি আসবে। ভবিষ্যতের উন্নত সংস্করণগুলিতে বিজ্ঞানীরা এই দিকনির্দেশক বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করে প্রকৃত অন্ধকার পদার্থ সংকেত এবং এলোমেলো পটভূমি কোলাহলকে আলাদা করতে পারবেন, যা এর চূড়ান্ত আবিষ্কারের দিকে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ইয়োনিট হচবার্গ, যিনি এই প্রকল্পের অন্যতম প্রধান বিজ্ঞানী, বলেছেন, “এই প্রথম আমরা বিশেষভাবে হালকা অন্ধকার পদার্থ কণার অস্তিত্বের উপর নতুন সীমা স্থাপন করতে পেরেছি। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত প্রত্যক্ষ শনাক্তকরণের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য এটি বৃহত্তর পরীক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম ধাপ।” প্রকল্পের পরবর্তী পর্যায়, NILE QROCODILE, ডিটেক্টরের সংবেদনশীলতা আরও বৃদ্ধি করবে এবং পরীক্ষাকে ভূগর্ভে স্থানান্তরিত করা হবে যাতে এটি কসমিক রশ্মি থেকে সুরক্ষিত থাকে। এই গবেষণাটি Physical Review Letters জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এই অগ্রগতি শুধুমাত্র অন্ধকার পদার্থের রহস্য উন্মোচনেই সহায়ক হবে না, বরং এটি মহাবিশ্বের গঠন ও বিবর্তন সম্পর্কে আমাদের ধারণাকেও প্রসারিত করবে। এই ধরনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিজ্ঞানীদের মহাজাগতিক রহস্য উদঘাটনে নতুন পথের সন্ধান দিচ্ছে।

উৎসসমূহ

  • Рамблер

  • First Sub-MeV Dark Matter Search with the QROCODILE Experiment Using Superconducting Nanowire Single-Photon Detectors

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।