চীন বিশ্বরেকর্ড গড়ল: ৩৫.১ টেসলার অল-সুপারকন্ডাক্টিং ম্যাগনেট তৈরি

সম্পাদনা করেছেন: Vera Mo

চীনা বিজ্ঞানীরা ৩৫.১ টেসলা (tesla) শক্তির একটি স্থিতিশীল চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে বিশ্বরেকর্ড স্থাপন করেছেন। এই যুগান্তকারী উদ্ভাবনটি উন্নত সুপারকন্ডাক্টিং বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির বাণিজ্যিকীকরণে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং পারমাণবিক ফিউশন, মহাকাশ বিদ্যুৎ চালিত রকেট, সুপারকন্ডাক্টিং ইন্ডাকশন হিটিং, ম্যাগনেটিক লেভিটেশন এবং বিদ্যুৎ সঞ্চালনের মতো অত্যাধুনিক ক্ষেত্রগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করবে।

এই শক্তিশালী চুম্বকটি তৈরি করেছে চাইনিজ একাডেমি অফ সায়েন্সেস (Chinese Academy of Sciences - ASIPP), হেফেই ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাপ্লাইড সুপারকন্ডাক্টিভিটি (Hefei International Center for Applied Superconductivity), হেফেই ন্যাশনাল কমপ্রিহেনসিভ সায়েন্স সেন্টারের ন্যাশনাল সিনক্রোট্রন রেডিয়েশন ল্যাবরেটরি (National Synchrotron Radiation Laboratory of Hefei National Comprehensive Science Center) এবং সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় (Tsinghua University)। দলটি অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রা এবং উচ্চ চৌম্বক ক্ষেত্রের অধীনে থাকা অবস্থায় স্ট্রেস কনসেন্ট্রেশন, শিল্ডিং কারেন্ট এফেক্ট এবং মাল্টি-ফিল্ড কাপলিং এফেক্টের মতো বিভিন্ন গুরুতর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে। এই উদ্ভাবনী সমাধানগুলি চরম পরিবেশে চুম্বকটির যান্ত্রিক স্থিতিশীলতা এবং ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক কর্মক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে।

পরীক্ষামূলক পর্যায়ে, চুম্বকটি ৩৫.১ টেসলা পর্যন্ত শক্তি উৎপন্ন করে ৩০ মিনিট ধরে স্থিতিশীলভাবে কাজ করেছে এবং নিরাপদে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে, যা এই প্রযুক্তিগত পদ্ধতির নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণ করে। এই চৌম্বক ক্ষেত্রের তীব্রতা পৃথিবীর ভূ-চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের তুলনায় ৭ লক্ষ গুণেরও বেশি, যা পূর্ববর্তী ৩২.৩৫ টেসলার বিশ্বরেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। এই ধরনের চুম্বকগুলি ম্যাগনেটিক কনফাইনমেন্ট ফিউশন (magnetic confinement fusion) ডিভাইসের একটি অপরিহার্য অংশ, যা উচ্চ-তাপমাত্রার প্লাজমাকে একটি 'চৌম্বকীয় খাঁচার' মধ্যে আবদ্ধ রেখে নিরবচ্ছিন্ন শক্তি উৎপাদন নিশ্চিত করে।

ASIPP দীর্ঘদিন ধরে ফিউশন গবেষণায় নিবেদিত এবং সম্প্রতি তারা সুপারকন্ডাক্টিং উপকরণ, ডিভাইস এবং সিস্টেমের সম্পূর্ণ স্থানীয়করণ অর্জন করেছে। চীনের ইন্টারন্যাশনাল থার্মোনিউক্লিয়ার এক্সপেরিমেন্টাল রিঅ্যাক্টর (ITER) মিশনের প্রধান ইউনিট হিসেবে, এই প্রতিষ্ঠানটি সুপারকন্ডাক্টর, কারেকশন কয়েল এবং ম্যাগনেটিক ফিডার সহ অসংখ্য সংগ্রহ প্যাকেজ সম্পন্ন করেছে। এই অর্জনটি সুপারকন্ডাক্টিং চুম্বক প্রযুক্তিতে একটি বড় অগ্রগতি। এটি শুধুমাত্র ফিউশন শক্তিকেই ত্বরান্বিত করবে না, বরং মহাকাশ বিদ্যুৎ চালিত রকেট প্রযুক্তির বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, যা ভবিষ্যতে মহাকাশ অনুসন্ধানের নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। এছাড়াও, ম্যাগলেভ ট্রেন এবং উন্নত পাওয়ার ট্রান্সমিশন লাইনের মতো ক্ষেত্রেও এর ব্যাপক প্রয়োগ দেখা যাবে, যা পরিবহন ব্যবস্থাকে আরও দ্রুত, দক্ষ এবং পরিবেশবান্ধব করে তুলবে। উন্নত নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স স্পেকট্রোমিটার এবং অন্যান্য বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির বাণিজ্যিকীকরণেও এই প্রযুক্তি সহায়ক হবে।

এই গবেষণাটি প্রমাণ করে যে, নিরলস প্রচেষ্টা এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে মানবজাতি প্রকৃতির গভীরতম রহস্য উন্মোচন করতে এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি উন্নত ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে সক্ষম। এই breakthrough কেবল একটি বৈজ্ঞানিক অর্জন নয়, বরং এটি মানবজাতির সম্মিলিত জ্ঞান এবং অগ্রগতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

উৎসসমূহ

  • europa press

  • China's all-superconducting magnet hits world-record steady field, boosts aerospace electromagnetic propulsion - Global Times

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।