"সময়ই মস্তিষ্ক" – এই প্রবাদটি স্ট্রোকের চিকিৎসায় দ্রুততার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে। স্ট্রোকের পর প্রতি মিনিটে প্রায় ২ মিলিয়ন নিউরন এবং ১৪,০০০ স্নায়ু সংযোগ নষ্ট হয়ে যায়, যার ফলে অপরিবর্তনীয় ক্ষতি হয়। বর্তমানে এই ক্ষতি নিরাময়ের কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই।
তবে, দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (USC), জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় (UZH) এবং ETH জুরিখের গবেষকদের একটি আন্তর্জাতিক দল ইন্ডুসড প্লুরিপোটেন্ট স্টেম সেল (iPS) ব্যবহার করে একটি যুগান্তকারী পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে, যা স্ট্রোক-আক্রান্ত মস্তিষ্কের টিস্যু পুনরুজ্জীবিত করতে সক্ষম। 'নেচার কমিউনিকেশনস'-এ প্রকাশিত এই গবেষণায়, বিজ্ঞানীরা প্রাপ্তবয়স্ক কোষ থেকে তৈরি iPS সেলগুলিকে নিউরাল স্টেম সেলে রূপান্তরিত করেন এবং স্ট্রোক-আক্রান্ত ইঁদুরের মস্তিষ্কে প্রতিস্থাপন করেন। পাঁচ সপ্তাহ পর দেখা যায়, প্রতিস্থাপিত কোষগুলির অধিকাংশই নিউরনে পরিণত হয়েছে এবং বিদ্যমান স্নায়ু কোষের সাথে কার্যকরভাবে যোগাযোগ স্থাপন করেছে। এর ফলে রক্ত-মস্তিষ্কের বাধা (blood-brain barrier) কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ইঁদুরগুলির হাঁটা ও আরোহণের মতো সূক্ষ্ম মোটর দক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে।
বর্তমানে স্ট্রোকের প্রধান চিকিৎসা, যেমন টিস্যু প্লাজমিনোজেন অ্যাক্টিভেটর (tPA), উপসর্গ দেখা দেওয়ার মাত্র সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োগ করতে হয়, যা অনেক রোগীর জন্য একটি বড় সীমাবদ্ধতা। প্রায় নব্বই শতাংশ স্ট্রোক ইস্কেমিক প্রকৃতির, যেখানে রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এই নতুন স্টেম সেল থেরাপিটি স্ট্রোকের এক সপ্তাহ পরেও কার্যকর হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদী অক্ষমতার চিকিৎসায় এক নতুন আশা জাগিয়েছে। এই সেলুলার থেরাপি রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু পুনরুৎপাদন করতে সাহায্য করে, যা রোগীদের দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসনে সহায়ক।
এই গবেষণাটি প্রি-ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে থাকলেও, এটি নিউরনের বৃদ্ধি এবং ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু মেরামতের ক্ষেত্রে এক বিরাট সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। বিজ্ঞানীরা বর্তমানে এই কোষগুলির দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পর্যবেক্ষণ করছেন এবং কীভাবে তাদের কার্যকারিতা আরও বাড়ানো যায় তা নিয়ে গবেষণা করছেন। মেসেনকাইমাল স্টেম সেল (MSCs) এবং নিউরাল স্টেম সেল (NSCs) সহ বিভিন্ন ধরণের স্টেম সেল স্ট্রোকের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, যা প্রদাহ কমাতে এবং নতুন রক্তনালী বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এই অগ্রগতি রিজেনারেটিভ মেডিসিনের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক, যা স্ট্রোক-আক্রান্ত রোগীদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার বিপুল সম্ভাবনা বহন করে। এটি মস্তিষ্কের আঘাত নিরাময়ের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যা আগামী দিনে আরও অনেক রোগীর জন্য আশার আলো দেখাবে।